জাতীয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় মসজিদ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় মসজিদ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদটি যেন এক স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন। ধর্মীয় অনুভূতি এবং আধুনিক স্থাপত্যের সৌন্দর্যের মেলবন্ধন এটি কেবল একটি মসজিদ নয়, বরং এক অবিস্মরণীয় শিল্পকর্ম। বিস্তৃত ২.২৫ হেক্টরজুড়ে স্থাপিত চারতলা বিশিষ্ট বর্গাকৃতির এই মসজিদটির দিকে তাকালে প্রতিটি ইঞ্চিতে নিপুণ কারুকার্যের ছোঁয়া উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশের মাটিতে এই স্থাপনা প্রমাণ করে, সৌন্দর্য ও ধর্মীয় অনুশাসন কীভাবে একে অপরের পরিপূরক হতে পারে।
দূর থেকে দেখলে মসজিদের সোনালি রঙের প্রলেপের আভা সূর্যের আলোয় দীপ্তিমান হয়ে ওঠে, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এই বিশাল মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে নির্মিত হলে এশিয়ার অন্যতম সুন্দর মসজিদ হিসেবে স্থান পাবে বলে ধারণা করা হয়। একসঙ্গে প্রায় ১৭ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন। শ্বেতপাথর ও সিরামিকের দৃষ্টিনন্দন কাজে নির্মিত এই মসজিদটি দিনের আলোতে এক ভিন্ন আভায় আলোকিত হয়ে ওঠে।
মসজিদের ভেতর প্রবেশ করলেই ৫১ হাজার বর্গফুট আয়তনের এক শান্ত পরিবেশ, যেখানে একসঙ্গে ৭ হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ার স্থান রয়েছে। সামনের পেডমেন্ট এলাকায় আরও ১০ হাজার মুসল্লির নামাজের জায়গা রয়েছে। মূল গম্বুজটি আকাশছোঁয়া উচ্চতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে; ৯০ ফুটের এই গম্বুজটির পাশে ১৪টি ছোট-বড় গম্বুজ স্থাপিত হবে, যা মসজিদের স্থাপত্যিক ভারসাম্য ও আভিজাত্য প্রকাশ করে।
মসজিদের প্রতিটি প্রবেশপথের উপরের গম্বুজগুলো সৌন্দর্যকে আরও গম্ভীর ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। আকাশের দিকে তাকালে এই স্থাপনার প্রতিটি অংশ যেন এক অনুপম শিল্পের নিদর্শন। কেবল নামাজের স্থান নয়, এখানে রয়েছে ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, ব্যাংকিং সুবিধা, কর্মচারীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া, ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ছাত্রীদের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা রাখা হয়েছে, যা নারী শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা ও ধর্মীয় মর্যাদা বজায় রাখে।
১৯৯৪ সালে এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। ২০০৪ সালে কাজের ৩৬ শতাংশ শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ১৩ বছর কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলেও, ২০১৭ সালে উপাচার্য রাশিদ আসকারীর উদ্যোগে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বাজেটে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়।
এই মসজিদ শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং দেশের স্থাপত্যশৈলীর গৌরবময় অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। দূর থেকে এই স্থাপনাটিকে দেখে মনে হয় এটি কেবল পাথর ও গম্বুজ নয়, বরং মানুষের বিশ্বাস, সাহস ও ঐতিহ্যের মিলিত প্রতীক, যা চোখের সামনে এক জীবন্ত চিত্রকল্প হয়ে ফুটে ওঠে।