রাজধানীর খিলগাঁও আবাসিক এলাকার ঐতিহ্যবাহী চৌধুরীপাড়া শিশু পার্কটি আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর দখলে থাকা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পার্কটি সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ থাকায় শিশুদের খেলাধুলা ও এলাকাবাসীর বিনোদনের একমাত্র উন্মুক্ত স্থানটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আনসার বাহিনী সশস্ত্র পাহারা দিয়ে প্রায় দুই বিঘা আয়তনের এই পার্কটি ঘেরাও করে দখলে নেয়। এরপর থেকে পার্কে প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়।
এলাকাবাসীর পক্ষে জানানো হয়, শিশু পার্কটি ১৯৬১ সালের নগর পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনসার বাহিনীর নারী হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাবে এলাকাবাসীর আপত্তির প্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে জায়গাটি শিশু পার্ক হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা দেন। এরপর ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনসার বাহিনীর বরাদ্দ বাতিল করে শিশু পার্ক হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টও ৯০ দিনের মধ্যে পার্কটি সিটি কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিয়ে আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণের নির্দেশ দিলেও, আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এই অবস্থার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে পার্কের সামনে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন খিলগাঁও আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান ময়না। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “ঢাকায় খেলার মাঠ, পার্ক, জলাশয় একে একে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে দায়ী একদিকে প্রভাবশালী গোষ্ঠী, অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনা। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য এমন উন্মুক্ত স্থান অপরিহার্য, অথচ তা বছরের পর বছর ধরে জবরদখলে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।