লাইফস্টাইল

ভবিষ্যতে যেসব খাবার খেয়ে বেচে থাকবে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ভবিষ্যতে যেসব খাবার খেয়ে বেচে থাকবে মানুষ

ভবিষ্যতের খাদ্য সংকটে  কি ধরনের খাবার  আমাদের উপকারে আসতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের রয়েল বোটানিক গার্ডেন্সের বিশেষজ্ঞরা। 

তাদের মতে, সারা বিশ্ব জুড়েই বিভিন্ন খাবার উপযোগী উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ সেগুলি আহার করে। 

কোন খাদ্য সংকটে এই উদ্ভিদ গুলো ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। এরকমই একটি উদ্ভিদ প্রজাতি হলো 'পান্ডানাস টেক্টরিয়াস।'  

অনেকটা আনারসের মত দেখতে এই গাছের ফল। গাছ গুলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ফিলিপাইন উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত জন্মে। 

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার  বিভিন্ন দেশে এই গাছের  ফল  মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে ব্যাবহার করা হয়। কাচা বা পাকা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া যায় এটি। 

একে ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত একটি খাবার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, কারণ এই গাছ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বেশ ভালো খাপ খাওয়াতে পারে। 

তাছাড়া তীব্র খরা কিংবা প্রবল বাতাসের চ্যালেঞ্জ সামলে নিজেকে  টিকিয়ে রাখতে  পারে পান্ডানাস। 

এছাড়াও এটি বেশ সুস্বাদু এবং প্রচুর পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ। যেসব অঞ্চলে এই উদ্ভিদ প্রজাতিটির ফলন ভালো হয়, সেসব জায়গায় এর চাষাবাদ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন গবেষকরা। 

কারণ সংকটের সময় সহজেই  সুস্বাদু একটি খাবার হাতের কাছে পাওয়া অনেক সময় বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

পান্ডানাস ছাড়াও মটরশুঁটি কিংবা শস্যদানাকে ভবিষ্যৎ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা। এটি যেমন  সস্তা, তেমনি রয়েছে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন এবং ভিটামিন। 

সারা বিশ্বে ২০ হাজার প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ আছে। কিন্তু এগুলোর মাত্র কয়েকটি প্রজাতি আমরা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এখনো গভীর অরণ্যে খুজলে শত শত অজানা প্রজাতির শস্য দানা পাওয়া যাবে। 

আরেকটি উন্নত জাতের শস্য হলো ' সিরিয়াল।' বিশ্বে এর প্রায় দশ হাজার প্রজাতি রয়েছে। এটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। নতুন খাদ্যের উৎস হিসেবে  'সিরিয়াল' এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। 

ফনিও বা ডিজিটারিয়া এক্সিলিস হলো একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান সিরিয়াল, যা কুসকুস, পোরিজ এবং পানীয় তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

এটি  আবহাওয়ার শুষ্ক অবস্থা মোকাবেলা করতে দারুণ কার্যকরী। তাই একে একটি সম্ভাবনাময় খাদ্য হিসেবে ভবিষ্যৎ খাদ্য তালিকায় যুক্ত করেছেন গবেষকরা।

ফলস ব্যানানা বা মিথ্যে কলা সাধারণ কলার কাছাকাছি একটি প্রজাতি। কেবল ইথিওপিয়ার একটি অংশেই মানুষ এটি খেয়ে থাকেন। 

কলার মতো দেখতে হলেও ফলস ব্যনানা সরাসরি খাওয়ার অযোগ্য। তবে এর কাণ্ড ও শিকড় গাঁজন করা যেতে পারে, যা রুটি তৈরিতে সহায়তা করে।

বিভিন্ন শস্য ও ফল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিয়ার ও মদ তৈরি করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মতো দেখতে এই ফসলের খাদ্য হিসেবে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
 
এরকম অনেক ফল কিংবা শস্য এখনো আবিষ্কার করা হয়নি, যা খাওয়ার উপযোগী এবং এক সময় মানুষ হয়তো সেসব খাবারই বেশি গ্রহণ করবে। 

বছরের পর পর নানা পদের খাবার খেয়ে এসেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের বিবর্তনের ধারাটাও অব্যাহত রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ২০৫০ সালের মধ্যে হয়তো মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাবে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অতিরিক্ত খরার কারণে চাষাবাদ কমেছে। 

এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে অনেক খাবার আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যত দিন যাবে, ততই খাদ্যসংকটে পড়বে বিশ্ব।