ছোট বেলায় আমরা অনেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়ানোর এই চাকরি বিবেচিত হয় পৃথিবীর অন্যতম রোমাঞ্চকর পেশা হিসাবে।
পাশাপাশি রয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা। শুরুর দিকে একজন পাইলট বেতন পেয়ে থাকেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো।
বেতনের এই পরিমান বাড়তে থাকে প্রতিবছর। এছাড়া বিদেশি এয়ারলাইন্সে সুযোগ সুবিধার পরিমান হয়ে থাকে আরো বেশি।
লোভনীয় এই পেশার চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে প্রতিবছর দরকার হয় প্রায় সতেরো হাজার নতুন পাইলট।।
তাই সঠিক ভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারলে যে কারো পক্ষে পাইল্ট হওয়ার স্বপ্ন পুরণ করা সম্ভব।
পাইলট হবার জন্য কিছু প্রশিক্ষন কোর্স করতে হয় সবাইকে। এসব কোর্সে ভর্তি হবার জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ হতে হবে।
অনার্স শেষ করার পরও ভর্তি হওয়া যায় পাইলট প্রশিক্ষন কোর্সে।
এর জন্য প্রার্থীদের হতে হবে কম পক্ষে ষোলো বছর বয়সী, পাশাপাশি শারীরিক ফিটনেস এবং ইংরেজি ভাষায় থাকতে হয় প্রয়োজনীয় দক্ষতা।
তবে এসব যোগ্যতা থাকলেই প্রশিক্ষন কোর্স করা যাবে না। এর জন্য আগে দিতে হয় ভর্তি পরীক্ষা।
লিখিত, মৌখিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তবেই পাওয়া যায় প্রশিক্ষণের সুযোগ। বর্তমানে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার দক্ষতাও দেখা হয়ে থাকে।
এসব ধাপ পেরোনোর পর শুরু হয় আসল প্রশিক্ষন। পুরো কোর্সটি সম্পন্ন হয় তিনটি ভাগে। প্রথমেই আসে গ্রাউন্ড কোর্স।
এই ধাপে সাধারণত বিমান চালনা সম্পর্কিত থিওরি শিখানো হয়। পাশাপাশি ফ্লাইট পরিচালনার নিয়ম নীতি প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
এরপর সত্যিকারের বিমান চালনার জন্য স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। এই লাইসেন্স দেয়ার আগে একটি পরীক্ষা নিয়ে থাকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।
লাইসেন্স শুধু মাত্র পাশ করা স্টুডেন্টদেরই দেয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা অনুমতি পান চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ঘন্টা বিমান চালানোর।
এই ধাপ শেষ হবার পর প্রার্থীকে আবার আবেদন করতে হয় প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স এর জন্য। তবে এটির মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিমান চালানো যায় না।
সেজন্য প্রয়োজন কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এটি পাওয়ার জন্য থাকতে হয় দেড়শো থেকে দুইশো ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা।
কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স পেয়ে গেলেই চাকরি করা যায় যেকোন এয়ারলাইন্সে।
এই পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয় সর্বোচ্চ তিন বছর সময়।
বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রশিক্ষন কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। প্রতি বছর দুটি সেশনে ভর্তি হওয়া যায় এসব প্রতিষ্ঠানে।
পাইলট হবার স্বপ্ন পুরোনের পথে প্রয়োজন হয় প্রচুর অর্থ। প্রশিক্ষন কোর্স সম্পন্ন করতেই প্রয়োজন হয় ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী কিছুটা কমবেশি হতে পারে খরচের এই পরিমান।
তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন হাতে অন্তত পঞ্চাশ লক্ষ টাকা রেখে- তবেই প্রশিক্ষন কোর্সে ভর্তি হবার জন্য, কারণ টাকার জন্য অনেকের প্রশিক্ষন বিলম্বিত হয়।
সেক্ষেত্রে পেরিয়ে যেতে পারে তিন বছরের বেশি সময়। তাছাড়া পর্যাপ্ত ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে পাওয়া যায় না লাইসেন্স ও।
তবে লাইসেন্স পেয়ে গেলে সাধারণত চাকরির অভাব হয় না। বাংলাদেশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স।
এসব এয়ারলাইন্সে প্রতিবছর নিয়োগ হয়ে থাকে পাইলটদের। এছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী পাইলটরা কাজ করতে পারেন বিদেশি বিভিন্ন বিমান সংস্থায়।