লাইফস্টাইল

যাত্রা শুরু হল বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২
যাত্রা শুরু হল বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতুর

চলতি বছরের ১৩ই আগস্ট যাত্রা শুরু করেছে ভারতের জম্মুতে অবস্থিত বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু চন্দ্রভাগা। চেনাব নদীর উপর নির্মিত এই রেলওয়ে ব্রিজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করতে যাচ্ছে ভারত।             


এটি ভারতকে এনে দেবে বিশ্বের উচ্চতম সিঙ্গেল আর্চ রেল সেতুর তকমা। এর মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর এবং কেন্দ্রীয় রাজধানী দিল্লী।


রেলসেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রতীক্ষার পর অবশেষে সগৌরবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু।   


চেনাব নদীর উপর তৈরি করা চন্দ্রভাগা রেলসেতুটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার বেশী উঁচু। নদীর পানির তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার উপরে অবস্থান করছে এটি। 


সেতুর উপর দিয়ে সর্বাধিক ১০০ কি মি বেগে চলাচল করতে পারবে ট্রেন। জম্মুর রিয়েসি জেলায় স্থাপিত হবে বারমুল্লা নামের রেলস্টেশন। 


রেলসেতু উদ্বোধনের পর এখন চূড়ান্তভাবে এই রুটে রেললাইন পাতার কাজ চলছে। এই উদ্দেশ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের কাটরা থেকে বানিহাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১১ কিলোমিটার পথে রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। 


দিল্লি থেকে কাশ্মীরের এই যাত্রা পথে থাকছে ১২.৬ কিলোমিটারের দীর্ঘ একটি টানেল। কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের মধ্যে মোট ৩৫টি প্যানেলের মধ্য দিয়ে ছুটে চলবে ট্রেনটি। 


যাত্রা পথে আরও থাকছে ৩৭ টি ছোট বড় সেতু। এদের মধ্যে ২৬ টি বড় সেতু এবং ১১টি ছোট সেতু।  


হিমালয় পর্বতের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই রেল সেতু তৈরি করতে ব্যাপক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় প্রস্তুতকারী সংস্থাকে। 


তাছাড়া চেনাব নদীর উপর ব্রিজ তৈরি করাটা ভারতীয় রেলের জন্য একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।      


তারপরও যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে নির্মাণ কাজে। সেতুটি সম্পূর্ণভাবে ঝড়, তুষার এবং ভূমিকম্প নিরোধক। 


এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে প্রবল তুষারপাত কিংবা ভূকম্পনের মতো ঘটনাতেও সহজে এর ক্ষতি হবে না। প্রকৌশলীদের মতে, ব্রিজটি ১২০ বছর টিকে থাকতে পারবে।    


আরও একটি বিশেষত্ব হল, এমন মজবুত ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে যে, তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে নেমে গেলেও ক্ষতি হবে না এর।  


ফলে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও সঙ্কুচিত হবে না সেতুটি। এমনকি ২৬৬ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত বাতাসের বেগেও সুরক্ষিত থাকবে বলে দাবি করা হচ্ছে।   


সেতুতে রয়েছে প্রধান ৭ টি পিলার। পাঁচ নম্বর পিলারটির উচ্চতা ১০৩ মিটার এবং এটি দিল্লীর বিখ্যাত কুতুবমিনারের থেকেও অধিক উচ্চতাসম্পন্ন।       


চেনাব সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ৭৮০০ টন স্টিল এবং প্রায় ২৮ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন ইস্পাত।


দিল্লী এবং জম্মু ও কাশ্মীর উভয়ই ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। চেনাব সেতুর ফলে বিমান ও সড়ক পথে যোগাযোগের পাশাপাশি দেশটির দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মধ্যে রেলযোগেও যোগাযোগ স্থাপিত হল।  


সেতুটির কল্যাণে সবচেয়ে বেশী সুফল ভোগ করবে ভারতের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন খাত। বর্তমানে কাশ্মীর যেতে হলে দিল্লী পর্যন্ত বিমানপথে গিয়ে সেখানে ট্রানজিট নিয়ে পুনরায় অন্য ফ্লাইটে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে পৌঁছাতে হয়।  


কিন্তু চেনাব রেলের মাধ্যমে দিল্লী থেকে কাশ্মীর যেতে এর থেকে খরচ কম পড়বে; সেই সাথে যাত্রীরা যাত্রাপথে কাশ্মীরের অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবে।   


তাছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়া এই যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ বিমানপথে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য কাশ্মীর পৌঁছানোর মতো সমস্যা রেলযাত্রার ক্ষেত্রে নেই।


রেলপথে দিল্লি ও কাশ্মীরকে সংযুক্তিকরণ ভারতীয় রেলের ইতিহাসেও একটি অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ চেনাব সেতুর মাধ্যমে রেলপথে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সহজেই সংযোগ স্থাপিত হবে।    


এতে একদিকে যেমন উপকৃত হবে দেশটির পর্যটন খাত, তেমনি অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমও সম্প্রসারিত হতে পারবে। বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী অবকাঠামো হওয়ায় বহির্বিশ্বকেও আকৃষ্ট করবে ভারতের এই অর্জন।     


বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতুর উদ্বোধন পর রেললাইনের বাকি কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তারপরই কার্যক্রম শুরু করবে পৃথিবীর উচ্চতম রেলপথ।