মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোর আঘাতে দেশটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। শক্তিশালী এই ঝড়ে অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন, এবং হাজার হাজার পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ঝড়ে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রোববার ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ফরাসি দ্বীপ মায়োটে তাণ্ডব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় চিডো মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে। ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়া এই ঝড়টি দেশটির ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত। এর তাণ্ডবে পুরো অঞ্চলটি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে যায়।
মোজাম্বিকের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (আইএনজিডি) জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে ৩৪ হাজারেরও বেশি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অধিকাংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ধসে পড়া ইটের দেওয়ালের আঘাতে। ঝড়ের ফলে স্কুল এবং স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়ে পড়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
আইএনজিডি ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতিকে "হৃদয়বিদারক" বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা চলছে, তবে বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দুর্গম পরিবেশ ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলছে। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল, যেসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রায়শই আঘাত হানে।
পাওলো টমাস, আইএনজিডির মুখপাত্র, বলেন, "চিডোর কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ অকল্পনীয়। নিহতদের বেশিরভাগই ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন।" তিনি আরও জানান, ঝড়ের পর বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্য আশ্রয় ও খাবারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
মায়োটে দ্বীপেও ঘূর্ণিঝড় চিডোর ধ্বংসযজ্ঞ ছিল ভয়াবহ। সেখানে শত শত মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়। মায়োটে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় চিডোর তাণ্ডবে মোজাম্বিকের বিপর্যস্ত অবস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার পুরো অঞ্চলজুড়ে আবহাওয়াজনিত বিপদ আরও বাড়ছে। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়া এই দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।