সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নাটকীয় পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব হুমকির মুখে পড়েছে। দামেস্কে নতুন বিদ্রোহী নেতৃত্বের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া এখন সিরিয়ায় তার মূল সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে মরিয়া। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল খমেইমিম বিমানঘাঁটি এবং ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর তারতুসে রুশ নৌঘাঁটি তাদের মধ্যপ্রাচ্য উপস্থিতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ আসাদ সরকারকে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল। কিন্তু আসাদের পতনের পর রুশ মিত্ররা মস্কোতে পালিয়ে গেছে এবং সিরিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব রক্ষা করার কৌশল বদলাতে হচ্ছে। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ বলেছেন, রাশিয়া এখন কূটনীতির দিকে ঝুঁকছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করছে।
মিখাইল বোগদানভ জানিয়েছেন, রাশিয়া আশা করে এইচটিএস বিদ্রোহীরা ‘সব ধরনের বাড়াবাড়ি’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং সিরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া এইচটিএসের কাছ থেকে কূটনীতিক ও অন্যান্য বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
রাশিয়া সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সামরিক ঘাঁটিগুলো রক্ষার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারতুসে রুশ নৌঘাঁটি এবং লাতাকিয়ার নিকটবর্তী খমেইমিম বিমানঘাঁটি এখনো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বোগদানভ বলেছেন, ‘ঘাঁটিগুলো সিরিয়ার যে ভূখণ্ডে ছিল, এখনো সেখানেই আছে। এ মুহূর্তে ঘাঁটিগুলোর বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
রাশিয়া দাবি করেছে, সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, আইএস এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বাকি অংশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে খমেইমিম ঘাঁটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব রক্ষা করতে তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আসাদের পতনের ফলে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্রোহী নেতৃত্ব কতটা রাশিয়াপন্থী থাকবে এবং রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না, তা নির্ভর করছে আসন্ন কূটনৈতিক আলোচনা ও পরিস্থিতির উপর।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অস্থির। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া কূটনীতি ও সামরিক শক্তি উভয়কেই কাজে লাগিয়ে নিজের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে আসাদের পতনের পর তাদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।