ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়।
গত ২ ডিসেম্বর এই হামলার ঘটনা ঘটে, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। ঘটনার পর বাংলাদেশ কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে এনে প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকার এই ঘটনাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করেছে।
ভারত এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে যে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটতে দেওয়া হবে না।
আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তার ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক চরম উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক ইস্যুতে টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। বিশেষত, সংখ্যালঘু ইস্যু এবং ত্রিপুরার ঘটনার মতো ঘটনাগুলো দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
সম্প্রতি, ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারতে একাধিক স্থানে প্রতিবাদ হয়। এর মধ্যেই ত্রিপুরার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে প্রশ্ন করলে, মুখপাত্র মিলার বলেন, "আমরা চাই, উভয় পক্ষ যেন নিজেদের মতবিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করে।" তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক সুরক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এ ধরনের ঘটনাগুলো সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
হামলার ঘটনার পর ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সফর করেছেন। ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। মিশ্রি বলেছেন, ভারতের সরকার ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে আগ্রহী।
আগরতলার হামলার ঘটনায় দুই দেশের জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভারতের কূটনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেকে এ ঘটনার নিন্দা জানালেও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কিছু অংশ এই ঘটনাকে সমর্থন করেছে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক জটিলতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।