আন্তর্জাতিক

পরমাণু ইস্যুতে এবার ৩ শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বসছে ইরান

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
পরমাণু ইস্যুতে এবার ৩ শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বসছে ইরান
ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি অভিযোগ করেছে যে, ইরান তাদের কার্যক্রমে আগের তুলনায় আরও সক্রিয় হয়েছে এবং উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ইউরোপের তিন দেশ—ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য—ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে।
তবে, ইরান এমন অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং এটি অস্ত্র তৈরির জন্য নয়। সম্প্রতি উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে, ইরান এই তিন দেশের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রবিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমায়েল বাঘাই ঘোষণা করেন যে, শুক্রবার ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে বসবেন। যদিও বৈঠকের নির্দিষ্ট স্থান জানানো হয়নি, তবে এটি পরমাণু ইস্যু ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্যই আয়োজিত।
বাঘাই এই বৈঠককে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের পার্শ্ব বৈঠকের ধারাবাহিক অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আলোচনায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ছাড়াও ফিলিস্তিন, লেবানন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো আলোচ্য বিষয় হতে পারে।
সম্প্রতি আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ইরান সফর করেছেন। এই সফরের সময় ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিশেষ করে, ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতার ইউরেনিয়াম—যা অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহারযোগ্য মানের কাছাকাছি—সীমিত রাখার বিষয়ে তারা সম্মতি জানিয়েছে।
তবে, এর মধ্যেই ইরান ঘোষণা করেছে যে তারা আরও উন্নত সেন্ট্রিফিউজ চালু করবে, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি এই পদক্ষেপকে দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নত করার একটি ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইউরোপের তিন দেশ—ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তাদের নেতৃত্বে জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে তারা ইরানকে আন্তর্জাতিক আইন মানতে এবং পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে আহ্বান জানিয়েছে।
এই বৈঠক দুই পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক হতে পারে। যদি ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে আরও সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়, তবে এটি পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
তবে, সমালোচকরা মনে করেন, ইরানের এ ধরনের উদ্যোগ হয়তো সময়ক্ষেপণের একটি কৌশল। কারণ, ইরান ইতোমধ্যেই উন্নত সেন্ট্রিফিউজ চালু করার ঘোষণা দিয়েছে, যা তাদের সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা আরও বাড়াবে।
ইরান দাবি করেছে যে, তারা পরমাণু শক্তি নিয়ে আইএইএ-এর সাথে তাদের "প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা" চালিয়ে যাবে। তবে, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ রয়ে গেছে যে ইরানের প্রকৃত লক্ষ্য হয়তো পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করা।
এই বৈঠক ইরান এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এর সফলতা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের আপস এবং আস্থা তৈরির প্রচেষ্টার উপর।