আন্তর্জাতিক

ইরানে হিজাব না পরা নারীদের দেওয়া হবে মানসিক চিকিৎসা

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪
ইরানে হিজাব না পরা নারীদের দেওয়া হবে মানসিক চিকিৎসা
ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক, এবং যারা এই আইন মানতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের জন্য এবার একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে দেশটির সরকার। হিজাব না পরা নারীদের ‘মানসিক সমস্যা’ রয়েছে বলে দাবি করে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিশেষ ক্লিনিক চালু করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তবে এই উদ্যোগ নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
ইরানের নারী ও পরিবার বিভাগের নীতি এবং অনৈতিকতা প্রতিরোধী হেডকোয়ার্টারের প্রধান মেহরি তালেবি সম্প্রতি এই ক্লিনিক খোলার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, হিজাব না পরা নারীদেরকে ‘বৈজ্ঞানিক এবং মানসিক’ চিকিৎসা প্রদান করা হবে। তাদের আচরণকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে সরকার মনে করছে যে, এই নারীদের মানসিক সহায়তা প্রয়োজন।
তালেবি আরও জানান, এসব ক্লিনিক তাদের আচরণ সংশোধনে ভূমিকা রাখবে। তবে এই ঘোষণা শোনার পর থেকেই নারীবাদী সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করছে।
ইরানের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী হোসেন রাইসি বলেছেন, হিজাব আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য যে ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা ইসলামের নীতি এবং ইরানের প্রচলিত আইন উভয়েরই পরিপন্থী। তিনি এই উদ্যোগকে নারীদের প্রতি চরম অবমাননা এবং অধিকার হরণের একটি নতুন রূপ বলে অভিহিত করেছেন।
রাইসি আরও বলেন, “এই উদ্যোগ নারীদের স্বাধীনতাকে দমন করার একটি কৌশল। ক্লিনিকগুলো প্রকৃতপক্ষে নির্যাতনের নতুন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”
ইরানের বেশ কয়েকজন নারী এই উদ্যোগ নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, “এটি কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, এটি আসলে একটি কারাগার। আমাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে, বিদ্যুৎ সংকট, খাদ্যের অভাব মোকাবিলা করছি। অথচ সরকার আমাদের পোশাক নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের আন্দোলন শুরু করতে হবে। অন্যথায় কারাগারই হবে আমাদের জায়গা।”
এই ধরনের হস্তক্ষেপকে নারীর মৌলিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অন্য অনেক নারী।
দুই সপ্তাহ আগে ইরানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিজাব আইন লঙ্ঘনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরীদের সামনে অন্তর্বাস বাদে শরীরের সব কাপড় খুলে ফেলেন। তার অভিযোগ, হিজাব না পরায় তাকে হেনস্তা করা হয়। এই প্রতিবাদের পরে তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এর আগে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনা ইরানজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দেশের নারী সমাজের মধ্যে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি ইরান সরকার হিজাব আইন কার্যকরে আরও কঠোরতা আরোপ করেছে। যারা এই আইন লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, সরকারের এই উদ্যোগ ইরানের নারীদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা আরও বাড়াবে। এর ফলে দেশটিতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে এই ক্লিনিককে ‘আইন লঙ্ঘনকারীদের কারাগার’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। বিশেষ করে নারীদের মানসিক চিকিৎসার নামে তাদের স্বাধীনতা হরণ করার এই পরিকল্পনা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি করছেন অধিকারকর্মীরা।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক নারী এই বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। ইরানে চলমান আন্দোলনগুলো নারীদের স্বাধীনতার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। ২০২২ সালে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
ইরানের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এটি নারীদের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং একটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।