আন্তর্জাতিক

প্রথম নারীকে নিয়ে ৫০ বছর পর আবার ও চাঁদে মানুষ পাঠাচ্ছে নাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩
প্রথম নারীকে নিয়ে ৫০ বছর পর আবার ও চাঁদে মানুষ পাঠাচ্ছে নাসা
এই প্রথম চাঁদে পা পড়বে কোনো নারীর। এই প্রথম চাঁদে যাচ্ছেন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ। এই প্রথম চাঁদে যাবেন কানাডার কোনো নাগরিক। এবারের চন্দ্রাভিযান বেশ স্মরণীয় হতে যাচ্ছে কয়েকটি কারণে। কেননা, অনেকগুলো ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে একসঙ্গে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা -নাসা,  সবশেষ চন্দ্র অভিজানের প্রায় ৫০ বছর পরে, ২০২৪ সালে আবারো চন্দ্র অভিযান এর ঘোষণা দিয়েছে।

চাঁদে যাওয়ার এবারের মিশনে থাকবে মোট চারজন নভোচারী। এদের মধ্যে একজন নারী , একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, এবং দুজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ।  এবারের চন্দ্র অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস-২’ লুনার মিশন। ৩রা এপ্রিল সোমবার, চন্দ্রাভিযানের নাম ও দল ঘোষণা করেছে নাসা।অভিযানটির কমান্ডার হিসাবে থাকবেন রিড ওয়াইজম্যান, পাইলট হিসেবে থাকবেন ভিক্টর গ্লোভার, মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকবেন ক্রিস্টিয়ানা কোচ ও জেরেমি হ্যানসন। 

যারা এবার চাঁদে যাচ্ছেন, সেই চার নভোচারীর মধ্যে তিনজন আমেরিকান এবং একজন কানাডিয়ান। প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাগারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন।নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশিদিন মহাকাশের গবেষণাগারে সময় কাটিয়েছেন চাঁদে পা দিতে যাওয়া নারী ক্রিস্টিনা কোচ। সব মিলিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন ১১ মাস। এ ছাড়া নাসার প্রথম তিনটি সর্ব-মহিলা মহাকাশযাত্রার অংশও ছিলেন তিনি। এবারের চন্দ্রাভিযানে তাকে মিশন স্পেশালিষ্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ নভোচারীটির নাম ভিক্টর গ্লোভার। মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক এ পাইলট এখন পর্যন্ত চারবার মহাকাশে গেছেন। তিনিই আর্টেমিস-২ চন্দ্রাভিযানে পাইলটের দায়িত্ব পালন করবেন। জেরেমি হানসেন, কানাডার বিমানবাহিনীর একজন কর্নেল। তিনিই প্রথম কানাডিয়ান যাকে চন্দ্রাভিযানের জন্য বাঁছাই করা হয়েছে। তিনিই এ অভিযানে মিশন স্পেশালিষ্টের দায়িত্ব পালন করবেন। অপর নভোচারী রেড ওয়াইজম্যান যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমানের পাইলট। তাকেই আর্টেমিস-২ অভিযানের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।

মানুষ প্রথম চাঁদে যায় ১৯৬৯ সালে, যা সারা পৃথিবী মানুষ মনে রেখেছে  এখনও ।অ্যাপোলো-১১ মিশন থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে পা ফেলে নীল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, "একজন মানুষের জন্য এটি ছোট একটি পদক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট ঘটনা। এর পর প্রায় তিন বছর ধরে পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহটিতে অবতরণ করেছে মনুষ্যবাহী ছ'টি মিশন, চাঁদের পিঠে হেঁটেছেন মোট ১২ জন নভোচারী।

এসময় তারা ছবি তুলেছেন, পতাকা গেড়েছেন, পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং চাঁদের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা ৩৮০ কেজির মতো নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন। সবশেষ মিশনটি পাঠানো হয় ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন ভাবা হয়েছিল ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো ঘন ঘন চাঁদে যাবে এবং উপগ্রহটি মহাকাশ গবেষণায় নিয়মিত এক গন্তব্যে পরিণত হবে। কিন্তু সেরকম হয়নি। ১৯৭২ সালের ওই মনুষ্য-মিশনই ছিল শেষ অভিযান এবং চাঁদে পৃথিবীর শেষ অতিথি ছিলেন নভোচারী ইউজিন সারনান। তার পরে গত অর্ধ-শতাব্দী কাল ধরে আর কেউ চাঁদে অবতরণ করেন নি।

এক হিসেবে বলা হয়, পৃথিবীতে বর্তমানে যতো মানুষ আছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি চাঁদের পিঠে কাউকে হাঁটতে দেখেনি। অবশেষে, ২০২৪ সালে এই চার নভোচারী আবারও চাঁদে যাবেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে মিশনে যেসব নভোচারী থাকবেন তারা চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবেন না। এর বদলে চাঁদের পেছন দিক দিয়ে ১০ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসবে এই মিশনে ব্যবহৃত নভোযানটি।  এর মাধ্যমে মানব ইতিহাসে মানুষকে বহনকারী কোনো নভোযান পৃথিবীর সব থেকে দূরে যাবে।