আন্তর্জাতিক

কি কি আছে আইফেল টাওয়ারের ভিতরে? কি দেখেন পর্যটকরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
কি কি আছে আইফেল টাওয়ারের ভিতরে? কি দেখেন পর্যটকরা?

কম্পিউটার ছাড়া শুধুমাত্র কাগজে কলমে ডিজাইন করে, বানানো হয়েছিল আইফেল টাওয়ার। নির্মাণের সময় বলা হয়েছিল এটি প্যারিসের সৌন্দর্য্য নষ্ট করবে।

তাই মাত্র ২০ বছর পরেই ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিস্ময় হয়ে এটি আজও দাড়িয়ে আছে। আইফেল টাওয়ার ছাড়া বর্তমানে ফ্রান্স কিংবা প্যারিসকে কল্পনাই করা যায় না।

বৃহৎ স্থাপনাটির সবচেয়ে উপরের তলায় আছে একটি গোপন কক্ষ। যেখানে বসে মিটিং করতেন টমাস আলভা এডিসনের মতো বিজ্ঞানীরা। প্রায়শই প্যারিসের ধনী ব্যক্তিরা কক্ষটি ভাড়া নিতেন নিজেদের প্রয়োজেনে।

প্যারিসের সেইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম নিদর্শন আইফেল টাওয়ার। গোস্তাভ আইফেল ১৮৮৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

এক সময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থাপনাটিতে মোট ৩টি ফ্লোর আছে। যার সবগুলোই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। উপরে যাওয়ার জন্য লিফট এবং সিড়ি, দুই ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে।

১৮৯ ফুট উচ্চতায় ১ম ফ্লোরে আছে মোট ৩টি কক্ষ। যেখানে রয়েছে দোকান, থিয়েটার, অবজারভেশন জোন এবং আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা। ঘুরতে আসা অতিথিদের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট আছে প্রথম তলায়।

স্বচ্ছ কাচের ফ্লোরে দাড়িয়ে উপভোগ করা যাবে নিচের দৃশ্য। তবে উচ্চতা ভীতি থাকলে এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এখানে পর্যটকরা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিড়ি অথবা এলিভেটর দিয়ে যেতে পারবে।

মজার বিষয় হলো, পূর্বে প্রথম তলায় একটি ডাকঘর ছিল। ভ্রমনকে স্মরনীয় করে রাখতে অনেকেই এখান থেকে বন্ধুদের ঠিকানায় চিঠি  পাঠাতেন। বর্তমানে অবশ্য এমন কোন সুযোগ নেই।

ডাবল ডেকের দ্বিতীয় ফ্লোরের উচ্চতা ৩৭৯ ফুট। পর্যটকদের কাছে আইফেল টাওয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান এটি। এর পিছনে যথেষ্ট কারনও আছে।

এখানে থাকা অবজারভেশন ডেকে দাড়িয়ে, প্যারিস শহরের হৃদয় জুড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এত উচু থেকে পুরো শহর সবার চোখে ধরা দেয় ভিন্ন এক রুপে।

দ্বিতীয় ফ্লোর থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন আইকনিক স্থাপনার ক্লেয়ার ভিউ পাওয়া যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো, the Grand Palais, Louvre Museum , Montmartre hill এবং Invalides museum. পাশ দিয়ে বয়ে চলা সেইন নদীর অপূর্ব দৃশ্য যে কারো মন ভালো করে দিবে। 

শুধু অবজারভেশন ডেক নয়, লেভেল টু'তে আছে আরো বেশ কিছু আকর্ষন। দুটি গিফট শপে পাওয়া যাবে নানারকম ব্যাতিক্রমী উপহার সামগ্রী। 

অতিথীদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য, প্রথম ফ্লোরের মতো এখানেও আছে একটি রেস্টুরেন্ট। ৩৭৯ ফুট উচ্চতার Jules Verne রেস্টুরেন্টে বসে স্বাদ নেয়া যাবে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের।  

দ্বিতীয় ফ্লোরে উঠার জন্য সিড়ি এবং এলিভেটর দুই ধরনের ব্যবস্থাই আছে। তবে একেবারে চূড়ায় বা লেভেল থ্রিতে যেতে চাইলে একমাত্র দ্বিতল লিফটই ভরসা। 

কেউ চাইলেও সিড়ি বেয়ে আইফেল টাওয়ারের সবচেয়ে উপরের তলায় উঠতে পারবে না। ভূমি থেকে ৯০৫ ফুট উচু এই ফ্লোরটিতে পর্যটকদের খুব বেশি যাতায়াত নেই। তাই তুলনামূলক নীরব থাকে এটি।

আইফেল টাওয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাড়িয়ে, পাখির চোখে প্যারিসের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। এর জন্য ফ্লোরটিতে রাখা হয়েছে কাচের জানালা। 

এছাড়াও শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে এখানে আছে একটি শ্যাম্পেইন বার। চূড়ায় দাড়িয়ে পুরো শহর দেখার পাশাপাশি, যে কেউ চাইলেই এলকোহল পান করতে পারবে বারে বসে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, নির্মাতা গোস্তাভ আইফেলের জন্য তৃতীয় তলায় একটি গোপন কক্ষ বানানো হয়েছিল। যেখানে ছিল নিজস্ব বাথরুম, রান্নাঘর, চেয়ার, টেবিল এবং একটি পিয়ানো। তবে আলাদা কোন বেডরুম ছিল না এতে।

এখানে বসে বিশ্বের নামকরা সাইন্টিস্টদের সাথে মিটিং করতেন গোস্তাভ আইফেল। যার মধ্যে অন্যতম হলেন বৈদ্যুতিক বাতির আবিস্কারক টমাস আলভা এডিসন।

বর্তমানে অ্যাপার্টমেন্টটি জনসাধারণের জন্য জাদুঘর হিসাবে উন্মুক্ত। সেখানে গেলেই আপনি দেখতে পারবেন গুস্তাভ আইফেল, তার কন্যা Claire Eiffel এবং টমাস এডিসনের মোমের মূর্তি। 

প্যারিসের বুকে দাড়িয়ে থাকা আইকনিক স্থাপনাটির একেবারে চূড়ায় আছে রেডিও এবং টেলিভিশন এন্টেনা। সিগন্যাল ট্রান্সফারের পাশাপাশি এগুলো মূল টাওয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করেছে।

১৮৮৭ সালে শুরু হওয়া আইফেল টাওয়ারের নির্মান কাজ শেষ হয়েছিল ১৮৮৯ সালে। ১০৮৩ ফুট উচ্চতার বিশাল স্থাপনাটি বানাতে, মাত্র ৩০০ জন শ্রমিকের সময় লেগেছিল ২ বছর ২ মাস ২ দিন।