জ্বালানী তেল বিশ্ব রাজনীতির একটি বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার কারণে জ্বালানী তেলকে ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ নামে ডাকা হয়।
রাশিয়া ইউক্রেন বিরোধের জের ধরে তেলের সাপ্লাই চেন ২০২২ সালে পুরোপুরি বদলে যায়। এমনকি জ্বালানী তেল সম্পর্কিত সংকটেও পড়তে হয় কিছু কিছু দেশকে।
আবার রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে এ বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক লাফে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়েও পৌঁছে যায়।
যা পুরো বিশ্বেই তেলের বাজারে অস্থিশিলতা তৈরি করে।
তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য বরাবরই এসব দেশকে অন্যান্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়।
এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তেলের মজুদে সবচেয়ে এগিয়ে আছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা।
দেশটিতে সর্বমোট তিনশ তিন দশমিক আট বিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানী তেল মজুদ আছে।
তবে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও তেল উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় তুলনামূলকভাবে নিচের দিকে রয়েছে এই দেশটি।
২৫৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের রিজার্ভ নিয়ে সর্বোচ্চ তেলের মজুদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব।
বৈশ্বিক তেলের বাজারে প্রভাবশালী এই দেশটি ওপেকের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী হিসেবে বিবেচিত।
সৌদি আরবের জাতীয় তেল কোম্পানি ‘সৌদি এরাবিয়ান অয়েল’কে আয়ের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়।
তবে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার সময় দেশটি তেল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে বেশ বিতর্কের মুখেও পড়েছিল।
পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানে বর্তমানে তেলের রিজার্ভ রয়েছে ২০৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ব্যারেল। তবে তৃতীয় সর্বোচ্চ তেলের মজুদ থাকা এই দেশটিকে নিয়ে বিতর্কও রয়েছে অনেক।
ইরানের তেলের বাজারের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনেক বছর থেকেই।
যার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেবল কতিপয় দেশই ইরানের থেকে জ্বালানী তেল ক্রয় করতে পারে।
বিশ্বের জনবহুল দুই দেশ ভারত এবং চীন মূলত ইরানের তেলের প্রধান ক্রেতা। এতো সংকট থাকা সত্ত্বেও চলতি বছর চীন দেশটির থেকে রেকর্ড পরিমাণ তেল কিনেছে।
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় ১৭০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে।
এর আগে গত বছর দৈনিক ৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারীর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিলো।
মূলত পরিবেশ সচেতনতার দিকে লক্ষ্য রেখে কানাডা দেশের অভ্যন্তরে তেলের ব্যবহার ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ব্যারেলে কমিয়ে আনে।
যার কারণে দেশটি অধিক পরিমানে তেল রপ্তানি করতে সক্ষম হয়।
ওপেকের সদস্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে বর্তমানে তেলের রিজার্ভ রয়েছে ১৪৫ বিলিয়ন ব্যারেল।
সর্বোচ্চ তেল মজুদে শীর্ষ দেশের তালিকায় পঞ্চমে থাকা এই দেশটির বৈদেশিক আয়ের ৯০ শতাংশই আসে অপরিশোধিত তেল বিক্রির মাধ্যমে।
ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এই দেশটি ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ব্যারল তেল উৎপাদন করেছে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে এবছর যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটির তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও আগামী বছর তা হ্রাস পেতে পারে।