গরমকালের অতিপরিচিত ফল তরমুজ, পানি শূন্যতা দূর করতে তরমুজের জুড়ি নেই। তবে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে হতে পারে হিতের বিপরীত।
প্রয়োজনের বেশি তরমুজ খেলে আপনি হজমে সমস্যা থেকে শুরু করে হৃদরোগে পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারেন।
গ্রীস্মকালের শুরু থেকেই সুস্বাদু এ ফল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। রমজানে সারাদিন পানি না খেয়ে থাকার ফলে পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তাই সারাদিনের পানি শূন্যতা দূর করতে ইফতারে পানির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ তরমুজ খান অনেকেই।
আর যারা রোজা রাখেন না, তাঁরাও গরমের দিনে শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর পানি পান করেন এবং পানি শূন্যতা দূর করার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ গরমে তৃষ্ণা মেটাতে প্রচুর তরমুজ খান। কারণ তরমুজের ৯২ ভাগই পানি।
শরীরকে ঠান্ডা করতে তরমুজের জুড়ি নেই। চর্বি না থাকায় ফলটি শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেই সাথে খেতেও সুস্বাদু। ফাইবার সমৃদ্ধ তরমুজে আরও আছে ভিটামিন এ, বি, সি ও খনিজ উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধে করে। এমনকি তরমুজ শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত কোনোকিছুই শরীরের জন্য উপকারী নয়। তরমুজে অতিরিক্ত ফাইবার থাকায় এই ফলটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া’সহ পেটের নানা রোগ হতে পারে। এতে থাকা সরবিটল নামক উপাদান বদ হজমের মতো সমস্যা বাড়ায়।
লাইকোপিন নামক রাসায়নিকের কারণে তরমুজের রং গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়। আর এই লাইকোপিন এক প্রকার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলেই পেটের সমস্যা দেখা দেয়।
তরমুজে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজ খাওয়া ঠিক নয়।
সেই সাথে তরমুজে অতিরিক্ত পানি থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করে ওভার-হাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে। ফলে শরীরে পানির পরিমাণ বাড়তে পারে, যা শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে পারে।
যদি খুব বেশি পানি শরীর থেকে বের করা না যায়, তাহলে এর ফলে পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি বা কিডনি ফেইলিউরের মতো সমস্যা হতে পারে। সেই সাথে কিডনির অনেক সমস্যা-ও দেখা দিতে পারে।
যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের জন্য তরমুজ একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ, তরমুজের রাসায়নিক উপাদান লাইকোপিন অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশে লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে।
তরমুজ পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং আমাদের শক্তি ও হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় পটাশিয়াম শরীরে গেলে হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা, যেমন- অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, নাড়ির গতি কমে যাওয়ার মতো নানা ঘটনা ঘটে।
তাই, পানি শূন্যতা দেখা দিলে হুট করেই প্রচুর পরিমাণ তরমুজ খাওয়া যাবে না। বরং পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এতে দেহ সুস্থ থাকবে।
বাংলাদেশে তরমুজ একটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে এর ফলনও হয় অনেক বেশি। আগে পিস প্রতি তরমুজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ঢাকা সহ আশেপাশের এলাকায় কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় শত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।