আরএম সেলিম শাহী, শেরপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলসংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিনই অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন।
জানা যায়, সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার ২ লাখ লোকের একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কাগজে-কলমে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসক থাকার কথা ১৭ জন। কিন্তু আছে ১৪ জন। তার মধ্যে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান রয়েছেন প্রেষণে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ চারজন চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মায়া হোড়ের বাড়ি শেরপুর জেলা সদরে। নিয়মিত তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাওয়া যায় না। জেলা সদরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের জেলা সদরে এসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের।
এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা। কিন্তু আছে ২০ জন। ফলে মাঠ পর্যায়ে টিকা প্রদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে পাশাপাশি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। ফার্মাসিস্ট ৩ জনের মধ্যে আছে দুইজন। ক্যাশিয়ারের পদটি শূন্য রয়েছে। এমটি ল্যাব দুইজনের মধ্যে আছে একজন। এসএসিএমও ৯ জনের মধ্যে আছে ৫ জন। স্টোর কিপার নেই। অফিস সহকারী তিনজনের মধ্যে আছে দুইজন। অ্যাম্বুলেন্স আছে ড্রাইভার নেই। জুনিয়ার মেকানিক্স নেই। অফিস সহায়ক পাঁচজনের মধ্যে আছে তিনজন। আয়া দুইজনের মধ্যে আছে একজন। ওয়ার্ড বয় তিনজনের মধ্যে আছে দুইজন। নিরাপত্তা প্রহরীর দুইটি পদই শূন্য রয়েছে। মশালচি দুইজনের মধ্যে আছে একজন। ঝাড়ুদার পাঁচজনের মধ্যে আসে তিনজন। কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার ২৩ জনের মধ্যে আছে ২১ জন। জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর, ইনডোর ও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা লাভের আশায় ভীড় করে। কিন্তু চিকিৎসক ও লোকবলের অভাবে আগত রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ঝিনাইগাতী উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। ৫০ শয্যার একটি ভবনও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে ৫০ শয্যার নবনির্মিত ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু করা হলেও ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল পদায়ন করা হয়নি। ফলে জোড়া তালি দিয়ে চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জানা গেছে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এখানে যোগদানের পর থেকে তার প্রচেষ্টায় চিকিৎসা ব্যবস্থার কিছুটা উন্নত হলেও লোক বলের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজিব সাহা জানান, চিকিৎসকসহ জনবল সংকট দূরীকরণে উপর মহলে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনও পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে চিকিৎসা সেবা আরও এগিয়ে নেয়া যাবে।