স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনের জরিমানার প্রতি ঝোঁক, প্রজননস্থল ধ্বংসে নেই তেমন কোনো কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনের জরিমানার প্রতি ঝোঁক, প্রজননস্থল ধ্বংসে নেই তেমন কোনো কার্যক্রম
সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রভাব তুলনামূলক বেশি। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে গড়ছে। 

এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি শুধু জরিমানা করেই দায় সারছে।

এডিস মশার প্রজনন মৌসুমে মশার প্রজনন বন্ধে নেই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে কোনো সুফল মিলছে না। দিন দিন শনাক্তের হার বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার এখনো তেমন কোনো নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি।

তাই সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় মশা নিধন কর্মকাণ্ড অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কোথাও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। তাই জরিমানা করে ও লোক দেখানো কিছু কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

তারা বলছেন, একবার এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের পর সেখানে আবার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। লার্ভা শনাক্তে দুই সিটিতে কোনো গবেষণাগারও নেই। নেই কোনো কীটতত্ত্ববিদও। এ কারণে ডেঙ্গু রোধে লোক দেখানো কার্যক্রম ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, দুই সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দাবি করছে, সর্বোচ্চ চেষ্টার মধ্যেও প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্ত রোগী এবং মৃতের সংখ্যা।

এছাড়া দায়িত্বশীলদের লোক দেখানো অভিযান আর মশক নিধন কার্যক্রম পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন কম থাকে তখনই কাজ শুরু করা উচিত। মৌসুমের আগে যেসব জায়গায় মশার উপদ্রব বেশি থাকে সেখানে মশা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। যেন মৌসুমের শুরুতে এডিস মশা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ কারো নেই।”

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জরিমানার সিস্টেম বিভিন্ন দেশে থাকলেও আমাদের দেশে এ সিস্টেম চালু করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জরিমানা করে কোনো লাভ হবে না। যেভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সে অনুযায়ী কাজ করছে না রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে “

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি যেসব দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে তা অবৈজ্ঞানিক ও ভুল। এ কারণে এসব নির্দেশনা ও কার্যক্রম কোনো কাজে আসছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া দুই সিটিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দক্ষ জনবল নেই। মনগড়া ও উলটাপালটা পরামর্শ নিয়ে তারা কাজ করছে। এতে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। মশা মারতে তারা ফগিং ব্যবহার করছে-অথচ এতে মশা মরে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ডেঙ্গু সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, “এখানে বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। আমাদের সিটি কর্পোরেশনগুলো যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করে তার একটি প্রধান অংশই হচ্ছে প্রদর্শনবাদিতা। অর্থাৎ তারা যতটা দেখায় ততটা কার্যকরী কাজ তারা করে না।”

সিটি কর্পোরেশন কিছু কাজ করলেও তাদের পক্ষে একা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একসঙ্গে সাধারণ মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ইউএনবিকে বলেন, “ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই প্রক্রিয়াতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। আগামী দুই মাস হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রমও চালাতে হবে “

এদিকে, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে কোনো কোনো জায়গায় মশকনিধনকর্মীর দেখাই মেলেনি, আবার কোথাও টাকা দিলে ঘরের ভেতরে গিয়েও ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আবার কোথাও কোথাও ওষুধ ছিটালেও মশা যায় না।

জানা গেছে, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশন খরচ করেছে ১২৮ কোটি টাকা।