এক্সক্লুসিভ

৩১ টি বিয়ে ও ৩০ টি বিচ্ছেদ করে গিনেসবুকে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২
৩১ টি বিয়ে ও ৩০ টি বিচ্ছেদ করে গিনেসবুকে রেকর্ড

সর্বাধিক বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায় নাম তুলেছেন এক আমেরিকান পাদ্রী।     


বিভিন্ন রকমের বিচিত্র শখ থাকে মানুষের। শখের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কেও কেও নিজের নাম তুলে ফেলেন গিনেস বুকে।  তেমনিই এক ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়ার গ্লিন উলফ। 


তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন ৮৮ বছর বয়সের মধ্যে মোট ৩১ টি বিয়ে এবং ৩০ টি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য। বিশ্বে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বাধিক বিয়ে এবং বিচ্ছেদের ঘটনা।    


এমন আজব শখ বিশিষ্ট গ্লিন উলফ পেশাগত জীবনে গির্জার পাদ্রী ছিলেন। তবে পেশাগত কারণেই এমন কাজ করেননি তিনি। বরং বিয়ে করা এবং বিয়ে ভাঙাটা তার একটি অদ্ভুত নেশা ছিল।


জীবনের প্রথম বিয়েটি তিনি করেছিলেন ১৯২৬ সালে। ১ম স্ত্রী মারসি ম্যাকডোনাল্ড অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করলে গ্লিন ২য় বিবাহ করেন।


তারপর থেকেই চলতে থাকে তার ম্যারাথন বিয়ের ইতিহাস। তবে তিনি আলোচিত হয়েছেন কেবল এতোগুলো বিয়ে করার জন্য নয়, বরং অদ্ভুত সব হাস্যকর এবং অযৌক্তিক কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যও।    


তার এক স্ত্রী গ্লিনের টুথ ব্রাশ ব্যবহার করে দাঁত মেজেছিলেন একদিন। এতে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি। ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেয়ার ব্যাপারটি অপছন্দ হওয়ায় স্ত্রীকে একেবারে তালাকই দিয়ে দেয় এই পাদ্রী।


অন্য একজন স্ত্রী একদিন তাদের বেডরুমের বিছানায় বসে সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাচ্ছিলেন। ব্যাপারটি একেবারেই পছন্দ হয়নি অদ্ভুত স্বভাববিশিষ্ট গ্লিনের। এই তুচ্ছ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে ক্ষ্যাপাটে পাদ্রী।      


গ্লিনের সাংসারিক জীবনের মেয়াদেও বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। মোট ৩১ জন স্ত্রীর মধ্যে তিনি কারও সাথে ঘর করেছেন দীর্ঘ ১১ বছর আবার কাওকে ডিভোর্স দিয়েছেন মাত্র ১৯ দিনের মাথায়।


বিয়ে বাতিকগ্রস্ত পাদ্রীর সর্বশেষ বিয়েটি ছিল মাত্র ৭ দিনের জন্য। সেটি ছিল ৩১ তম স্ত্রী লিন্ডা উলফের সাথে। বিয়ের ৭ দিন পর গ্লিনকে ক্যালিফোর্নিয়ায় রেখে লিন্ডা চলে গেছিল ইন্ডিয়ানা স্টেটে।


এই বিচ্ছেদের কারণ যদিও স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় কেবল মাত্র খবরের পাতায় নিজের নাম উঠানোই ছিল তাদের উদ্দেশ্যে।            


আবার গ্লিনের মত লিন্ডারও ছিল বিয়ে বাতিক। তিনি মোট ২৩ জন পুরুষকে বিয়ে করে গিনেস বুকে নাম তুলেছিলেন। তাই গ্লিনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পেছনে এমন উদ্দেশ্য থাকাই স্বাভাবিক।


গ্লিনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের দাম্পত্য জীবন কাটে ২৮ তম স্ত্রী ক্রিস্টিন কামাচোর সাথে। তবে এই স্ত্রীর সাথে গ্লিনের বয়সের ফারাক ছিল ৩৭ বছর!  


তাদের একত্র জীবনের মেয়াদ ছিল ১১ বছর। এরপর তাকে ডিভোর্স দিয়ে ২৯ তম বিয়ে করে ফেলে এই খেয়ালি আমেরিকান।  


বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। গ্লিন তার জীবনে এমন বিয়েও করেছেন, যেখানে স্ত্রী তার প্রাক্তন ডিভোর্সি। অর্থাৎ, তালাক দেয়া কোন কোন স্ত্রীকে তিনি পুনরায় বিয়ে করেছিলেন।  


তার ৩১ জন স্ত্রীর মধ্যে মোট ৩ জন স্ত্রী ছিল, যারা ২য় মেয়াদে গ্লিনের জীবনসঙ্গী হয়েছিলেন এবং আবার বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হয়েছেন।       


বহু বিবাহের নেশাগ্রস্ত গ্লিনের এমন আচরণকে অনেকে পাগলামি মনে করেন। অনেকের আবার ধারণা মিডিয়ায় আলোচিত হওয়ার জন্যই এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই ব্যক্তি।


এতো জন স্ত্রীর মধ্যে কেবল শেষ স্ত্রী লিন্ডাই তাকে কিছুটা মনে রেখেছিল। প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে ইন্ডিয়ানা থেকে গ্লিনের সঙ্গে দেখা করতে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় এসেছিলেন। কিন্তু তার ১০ দিন আগেই মারা গেছিল গ্লিন।   


৮ দশকেরও দীর্ঘ সময়ের জীবনে তার ছিল ১৯ জন সন্তান আর মোট ৫৯ জন নাতি নাতনি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, তিনি দেহত্যাগ করলে এতো বড় পরিবারের কেওই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে আসে নি। তার শেষকৃত্য করেছিল ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কাউন্টির সদস্যরা।


শেষকৃত্যে খরচ করার জন্য স্ত্রী লিন্ডা বা গ্লিনের ছেলেরা কোন টাকা পয়সা দেয়নি। কিন্তু খামখেয়ালি প্রকৃতির এই পাদ্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তখনও জমা ছিল ৩৩৬ ডলার। সেই টাকা দিয়েই শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয় বিবাহ আর বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য গিনেস রেকর্ডের অধিকারী গ্লিন উলফের।