এক্সক্লুসিভ

এন্টার্কটিকা মহাদেশ নিয়ন্ত্রণ করে কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এন্টার্কটিকা মহাদেশ নিয়ন্ত্রণ করে কারা

মহাদেশ হলেও এন্টার্কটিকায় নেই কোন আলাদা শাসন ব্যাবস্থা কিংবা কোন দেশের একক নিয়ন্ত্রণ। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় জনমানবহীন অঞ্চলটিকে নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড,  জার্মানি, সুইডেন, জাপান সেখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের অনুসন্ধান  কার্যক্রম  বেশ আগে থেকেই শুরু করে। 

প্রথম দিকে এই অনুসন্ধান শান্তিপূর্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি রূপ নেয় এক প্রকার অদৃশ্য প্রতিযোগিতায়। 

কারণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে সব দেশের মাঝেই সেই মহাদেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার ইচ্ছা জেগে ওঠে৷ 

এন্টার্কটিকার শাসন ব্যবস্থা বা দখল কোন একক দেশের নয়। বরং বিভিন্ন দেশের যৌথ শাসন ব্যাবস্থা এখানে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য ১৯৫৯ সালে সব দেশের মাঝে একটি  চুক্তি  সাক্ষরিত হয়, যেখানে বিশ্বের ছেচল্লিশটি দেশের সাক্ষর রয়েছে। এটিই এন্টার্কটিক চুক্তি নামে পরিচিত। 

চুক্তির অংশ হিসেবে  প্রত্যেকটি দেশকে  কিছু শর্তাবলি মেনে চলতে হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, এন্টার্কটিকায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যাবহার করা যাবেনা। 

সব শর্ত মেনেই প্রথমে জনমানবহীন এই অঞ্চলে গবেষণা এবং অনুসন্ধান শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল খাতে মৌলিক গবেষণা  বাস্তবায়িত করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই খাতে চারশত আটাশি মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।

এন্টার্কটিকা মহাদেশের প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ জায়গাকে অস্ট্রেলিয়ার এন্টার্কটিক সংস্থা তাদের নিজেদের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। 

পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির  জন্য রাশিয়া এবং চীনও তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

এতে সেই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ, মৎস্য আহরণ এবং মজুদকৃত জ্বালানি তেল এর ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। 

চীন এন্টার্কটিক চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এন্টার্কটিকা মহাদেশের উন্নয়নের  জন্য বিপুল অর্থ  বিনিয়োগ করছে।

যার অংশ হিসেবে ত্রিশ বছরের মধ্যে  তিনটি এন্টার্কটিক স্টেশন স্থাপন করেছে এবং ২০২২ সালের মধ্যে রুশ সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে পঞ্চম স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করতে যাচ্ছে। 

অন্যান্য দেশের মতো নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে পিছিয়ে নেই রাশিয়া। এন্টার্কটিকা মহাদেশ নিয়ে রাশিয়ার রয়েছে সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা। 

ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় ভূ তাত্ত্বিক জরিপকারী সংস্থা রাশিয়ান জিওলোজিয়া  অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে  অফসোর তেল এবং গ্যাস  প্রাপ্তির  কার্যক্রম শুরু করেছে।

এছাড়া তুরষ্ক সেখান  নিজস্ব স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। সবার সাথে তাল মিলয়ে ইরানও প্রভাব রাখার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত এবং পাকিস্তান ও পিছিয়ে নেই। এন্টার্কটিকা মহাদেশে  নিজেদের কর্তৃত্ব জানান দিতে তারাও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের এত প্রাচুর্য থাকবে সেখানে সব দেশ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।  তবুও এন্টার্কটিক চুক্তিতে সাক্ষর করে  সব দেশ শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুসন্ধান এর জানান দিয়েছিলো।

তবে সেই চুক্তির বিধিনিষেধ ছিলো অনেক বেশি। তাই শক্তিশালী দেশ গুলো চাইছে যাতে চুক্তির বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা যায়। 

এদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে,  বিভিন্ন দেশের তৎপরতা নিজেদের প্রভাব বিস্তার এর সুযোগ কাজে লাগানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

তাছাড়া বিশ্বে যেভাবে জ্বালানি সম্পদের সংকট বাড়ছে, সবাই চাইবে নিজেদের দেশে সেসব সম্পদ মজুদ করতে। 

এতে এন্টার্কটিকা মহাদেশে সম্পদের  অনুসন্ধান চালানোর নামে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং বিভিন্ন পরাশক্তির দেশগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়া নিয়েও রয়েছে আশংকা।