এক্সক্লুসিভ

কোহিনূর হীরা আজ পর্যন্ত কোথাও বিক্রি হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
কোহিনূর হীরা আজ পর্যন্ত কোথাও বিক্রি হয়নি

বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিশেষ বস্তু হিসাবে বিবেচনা করা হয় মাউন্টেইন অফ লাইট বা কোহিনূর হীরাকে। বহুল আলোচিত এই মূল্যবান হীরাটি আজ পর্যন্ত কোথাও বিক্রি হয়নি বা কোনো নিলামে উঠেনি।

তবুও যুগ যুগ ধরে নানা রাজবংশের ইতিহাস জড়িত রয়েছে এর সঙ্গে। এছাড়া সাম্রাজ্যে বদলের সাথে সাথে মালিকানাও বদল হয়েছে এই হীরার।

যার ফলে এটি কখনো শোভা পেয়েছে মুঘল দরবারে, কখনো ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছে ইরানী যোদ্ধাদের হাতে, কখনো আবার সমৃদ্ধ করেছে আফগান শাসক কিংবা পাঞ্জাবি মহারাজাদের।

বর্তমানে এর অবস্থান টাওয়ার অফ লন্ডনে ক্রাউন জুয়েলের অংশবিশেষ হিসেবে। যদিও এর মালিকানা নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব রয়েছে অনেক জায়গায়।

কোহিনূর হীরার আসল মূল্য ঠিক কত, তা আজ পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায় নি। তবে ঐতিহাসিকতা এবং আকারের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, এর দাম আনুমানিক প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

শ্বেত শুভ্র হীরাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর নিঁখুত ৬৬টি পাশ। এ কারণেই সবচেয়ে নিখুঁতভাবে কাটা হীরা মনে করা হয় কোহিনূরকে।

কিভাবে এতোটা নিখুঁতভাবে কাটা হয়েছে তা নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি আজও। আলোর পাহাড় নামে পরিচিত এ হীরাকে একসময় বিশ্বের বৃহত্তম হীরা হিসাবে বিবেচনা করা হত।

প্রথমে এর সন্ধান পাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতে। যখন আবিষ্কার করা হয়, তখন এর প্রাথমিক ওজন ছিল ৭৯৩ ক্যারেট। কিন্ত কেটে ফেলার কারনে বর্তমানে এর ওজন এখন দাঁড়িয়েছে ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেট।

কেবল আকারেই নয়, এর নামেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে এটি কোহিনূর নামে ছিলো না। আবিষ্কারের প্রথম দিকে এটি সামন্তীকা হীরা নামে পরিচিত ছিলো। 

কোহিনুর হীরাকে ঘিরে গেঁথে আছে নানা মিথ ও গল্প। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে কোহিনূর হয় দেবতা, নয়তো নারীরা পরতে পারেন। পুরুষরা কখনোই এই রত্ন পরতে পারতেন না। 

লোকমুখে প্রচলিত গল্প অনুসারে, যতবারই কোনও পুরুষ কোহিনূর ধারণ করেছেন, ততবারই দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে তাঁর জীবনে।

তাই একে অভিশপ্ত হীরা বলেও মনে করা হয়। যদিও ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমন কোনো নথি পাওয়া যায় নি।

এ হীরাটি যখন রানী ভিক্টোরিয়ার মালিকানাধীনে ছিলো তখন তিনি ঘোষণা করেন, ইংল্যান্ডে কোনো রাজা এটি ব্যবহার করতে পারবে না। শুধুমাত্র রাজার স্ত্রী বা কোনো নারীই এটি ব্যবহার করার অনুমতি পাবেন।

কারণ কোহিনূরের অভিশাপ শুধুমাত্র পুরুষ মালিকদের মধ্যেই কাজ করে। তাই ইংল্যান্ডে যখন কোনো পুরুষ শাসক এসেছিলেন, তারা কখনোই এটি ব্যবহার করেন নি।

বর্তমানে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর চার্লসের দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যামেলিয়া পার্কার কোহিনূর হিরেটির অধিকারী হয়েছেন।

অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশ্বাস করেন, কোহিনুর ছিল অর্জুনের বাহুর অলঙ্কার। আবার অনেকে মনে করেন, কাকাতিয়া রাজবংশের দেবীমন্দিরে দেবীর চোখ হিসেবে ব্যবহার করা হতো একে।

সবার বিশ্বাস, আলোচনা এবং দ্বন্দ্ব নিয়েই কোহিনুর এখনও পৃথিবীবাসীর কাছে ঐতিহাসিক এক রহস্যের নাম।

এমনকি এই হীরা নিয়ে বহু উপন্যাস আর সিনেমাও বানানো হয়েছে। হৃতিক রোশানের ‘ব্যাং ব্যাং’ সিনেমার কাহিনী কোহিনূরকে কেন্দ্র করেই।