এক্সক্লুসিভ

সূর্যের অবস্থানের সাথে পরিবর্তীত হয় পাহাড়ের রং!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
সূর্যের অবস্থানের সাথে পরিবর্তীত হয় পাহাড়ের রং!

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপর অষ্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটোরিতে অবস্থিত অদ্ভুত এক পাহাড়, ম্যাজিক মাউন্টেন বা জাদুর পাহাড় খ্যাত উলুরু!

আমরা অনেকেই রেইনবো ফিস, রেইনবো কেক কিংবা রেইনবো ক্যান্ডেলের কথা শুনেছি কিন্তু কখনো কি রেইনবো স্টোনের কথা শুনেছেন?

অষ্ট্রেলিয়ার উলুরু পাহাড়ে দেখা মিলবে সেই রেইনবো স্টোনের। পাথুরে পাহাড়টি পূর্বে পরিচিত ছিলো আয়ার্স রক হিসেবে।

প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়টির উচ্চতা তিনশো আটচল্লিশ মিটার। পাঁচশো মিলিয়ন বছর আগে এই অঞ্চলটি ছিলো সমুদ্রের পানির নিচে।

পরবর্তীতে অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশ তৈরির সময় তা বিলীন হয়ে উলুরু সৃষ্টি হয়। যার শিলা গুলো পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান রুপ ধারণ করে।

দিনের বিভিন্ন সময় সূর্য়ের আলোর অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে পাহাড়টির গায়ের রং ও পরিবর্তন হয়।

এই রকম বৈশিষ্ট্যের কারনে মুগ্ধ হয়ে মানুষ এটিকে জাদুর পাহাড় হিসেবে নামকরন করে।

সকালে সূর্য উঠার সময় এক রকম রং তো দুপুরে আরেক রকম আবার বিকেলে অন্য রকম রং ধারনের বিচিত্র এক প্রাকৃতিক খেলা চলে সেখানে।

ভিন্ন ভিন্ন রংয়ে দেখা গেলে ও পাহাড়টি আসলে কালচে রংয়ের। তবে সূর্য়ের প্রভাবে কখনো লাল, কখনো গোলাপী, কখনো বা ধূসর আবার কখনো কখনো বেগুনি রঙয়ে দেখা যায় এটিকে।

সাধারণত সকালে সূর্য় উদয়ের সময় পাহাড়টির রং থাকে ধূসর, ধীরে ধীরে সূর্য যখন মাথার উপরে চলে আসে তখন এটি লালবর্ণ ধারন করে।

পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সোনালী রংয়ে পরিণত হয়। আবার সূর্যাস্তের সময় উলুরু গোলাপী ও বেগুনি রং ধারণ করে।

অষ্ট্রেলিয়ার অ্যানাঙ্গু আদিবাসীরা শুরু থেকেই উলুরুতে বসবাস করে আসছেন। যাদের কাছে পাহাড়টি একটি পবিত্র স্থান।

তারা বিশ্বাস করে এই উলুরু পাহাড়েই তাদের দেবতারা বাস করেন। তাই এরা এটিকে পূজো করে।

তাদের বিশ্বাস তারা স্রষ্টার আত্মার সাথে যুক্ত এবং স্রষ্টার বংশধর। তাই স্রষ্টা তাদেরকে উলুরুসহ আশপাশের বসবাসের জন্য জমি গুলোকে রক্ষা করার জন্য মনোনিত করেছেন।

উলুরু সর্বপ্রথম বিশ্বের নজরে আসে ১৮৭৩ সালের ১৯শে জুলাই। ব্রিটিশ অষ্ট্রেলিয়ান সমীক্ষক উইলিয়াম গোজ জায়গাটিকে আবিষ্কার করেন।

তিনি তৎকালীন সাউন অষ্ট্রেলিয়ার সরকার প্রধান স্যার হেনরি আয়ার্সে নামে এটিকে আয়ার্স রক হিসেবে নামকরন করেন।

ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে এটি। উলুরুর সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও এর আদিবাসীদের জীবনযাপন যেকোনো মানুষকেই আকৃষ্ট করবে।

প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক জাদুর পাহাড়টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে ভিড় জমান।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্সেস ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লস ১৯৭৩ সালে উলুরু ভ্রমণ করেন।

পাহাড়টির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অনেকেই এতে আরোহন করতে চান। কিন্তু আহরনের জন্য এটি খুবই দূর্গম একটি পাহাড়।

২০১৭ সালের আরোহনকারীদের মধ্যে মাত্র ষোলো শতাংশ এর চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হন।

আরোহন করতে গিয়ে বিপদের মূখে পড়েন অনেকে। এমনকি প্রাণহানীর মত ঘটনা ও ঘটে নিয়মিত।

সম্প্রতি পাহাড়টিতে আরোহন নিষিদ্ধ করেছে অষ্ট্রেলিয়ান সরকার। স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই পর্যটকদের পাহাড়টিতে আরোহন পছন্দ করেন না।

একে তারা পবিত্র স্থানটির অসম্মান বলে বিবেচনা করেন। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো জায়গাটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।