সারাদেশ

দুই সপ্তাহ ধরে নৌ চলাচল বন্ধ সেন্টমার্টিনে, খাদ্য সংকটের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
দুই সপ্তাহ ধরে নৌ চলাচল বন্ধ সেন্টমার্টিনে, খাদ্য সংকটের শঙ্কা
সর্বশেষ গত ২২ জুন কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ থেকে জরুরি পন্য নিয়ে কিছু সংখ্যক যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গিয়েছিল দুইটি ট্রলার। একই সঙ্গে ওই দিন সেন্টমার্টিন থেকে রোগী সহ ১৫ যাত্রী নিয়ে শাহপরীরদ্বীপ এসেছে দুইটি স্পীড বোট। এরপর থেকে গত ১৪ দিনে একটি ট্রলার বা স্পীড বোট সেন্টমার্টিন যায়নি। আর সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ আসেনি কোন নৌযান।
ফলে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আবার খাদ্যন দ্রব্য সংকটের শংকা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে, মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত নৌ রুট পরিবর্তন করে বিকল্প রুটে সেন্টমার্টিন নৌ যান সমুহ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমান উত্তাল সাগর ও আবহাওয়াগত পরিস্থিতির কারণে নৌ যান আসা-যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে বিকল্প রুটে দুটি ট্রলার ২২ জুন সেন্টমার্টিন আসে। দুই ট্রলারে তিন শতাধিক গ্যাসের সিলিন্ডার, কিছু খাদ্যপণ্য ও কয়েক যাত্রী ছিল। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ২টি স্পিডবোট শাহপরীর দ্বীপে গেছে। টানা ১৪ দিন আর কোন নৌ যান চলাচল করেনি।
তিনি জানান, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের যাওয়া হওয়া পন্য সহ ১০ জন যাত্রীর ট্রলারকে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে কয়েক গুলি বর্ষণ করা। গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিতকৃত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ ফেরা ট্রলারকে আবারও গুলি করা হল একই পয়েন্টে। গত ৮ জুন আরও একটি ট্রলারকে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পীড বোট লক্ষ্যক করে গুলি বর্ষণ করা হয়। তবে এই গুলি বর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরের জলসীমায় ছিল। মিয়ানমারের জলসীমা থেকে ট্রলার যোগে এগিয়ে এসেই এই গুলি বর্ষণের ঘটনাটি করা হয়। একই ৪ বার গুলি বর্ষণের ঘটনায় কোন হতাহত ছিল না। এই কারণে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ যান বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হল। 
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ১২ জুন জরুরি সভা করে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীর আসা যাওয়া ও পন্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকুল ব্যবহার করে যাত্রী আসা-যাওয়া শুরু হল। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে পণ্য নিয়ে গেল জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌ যান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এটা সর্বশেষ ২২ জুনের পর বন্ধ রয়েছে। দ্বীপে খাদ্য দ্রব্য সংকটের দিকে যাচ্ছে। যে খাদ্য রয়েছে তা ২/৩ দিনের বেশি যাবে না। দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার জন্য খাদ্য দ্রব্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বিকল্প নৌ রুটটি শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের ‘গোলগরা’ নামক এলাকা দিয়ে। ওই এলাকাটি বঙ্গোপসাগর হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ। একই সঙ্গে এখন বর্ষাকাল। ঝুঁকি বেড়েছে আরও বেশি। ট্রলার মালিক বা চালক ঝুঁকিপূর্ণ এই বিকল্প নৌরুট দিয়ে নৌযান চালাতে রাজি নন।
সেন্টমার্টিন স্পীড বোট মালিক সমিতির সভাপতি ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, ২২ জুনের পর কোন স্পীড বোট সেন্টমার্টিন থেকে আসা-যাওয়া করি। উত্তাল সাগর হওয়ায় বিকল্প পথটি স্পীড বোট ব্যবহারের উপযোগী নয়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমর্কতা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, খাদ্যসংকট নিরসনে নাফনদীর পরিবর্তে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল দিয়ে সেন্টমার্টিনে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ট্রলার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও সাগর উত্তাল থাকায় কোনো ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে না। কি করা যায় দেখা হচ্ছে।