বাংলাদেশ

৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পতাকা প্রথম উড়ে রাজারহাটে: আজ হানাদারমুক্ত দিবস

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পতাকা প্রথম উড়ে রাজারহাটে: আজ হানাদারমুক্ত দিবস
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে আজ ৬ ডিসেম্বর পালিত হলো হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে রাজারহাটকে মুক্ত ঘোষণা করেন। যদিও তখনও দেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়নি, তবুও সেদিন এই অঞ্চলে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা। দিবসটি প্রতি বছর উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনার প্রেক্ষাপটে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে গওহর পার্ক মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশ থেকে স্থানীয় কমান্ড গঠন করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আহম্মদ আলী বকসী, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও মহির উদ্দিন আহম্মদ। তাদের নির্দেশনায় विभिन्न থানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম্মদ হোসেন সরকারের টগরাইহাট গ্রামে মজুদ করা হয়। সেখানেই যুবক ও ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ওই বাড়ি থেকেই প্রথমে পুলিশ, আনসার, ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। একই বছরের ২৮ মার্চ রংপুর ইপিআর উইং-এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরদিন ২৯ মার্চ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠকে অংশ নিলে পরিস্থিতি সম্পর্কে কুড়িগ্রাম আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়।

৩০ মার্চ ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের নির্দেশে ইপিআর বাহিনীর অপর সদস্য সুবেদার নুর মোহাম্মদ, সুবেদার আবদুল মান্নান, সুবেদার আরব আলী ও বোরহান উদ্দিন তাঁদের সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাজারহাট হয়ে কুড়িগ্রামে যান। এরপর ১ এপ্রিল পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিরোধে তিস্তা নদীর ওপারে শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হয় এবং রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ইপিআর সদস্যদের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

৪ এপ্রিল পাকবাহিনী হারাগাছ হয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে লালমনিরহাটে অবস্থান নিলে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ঘাঁটি সরিয়ে রাজারহাট ও কুড়িগ্রামের ভেতরে চলে আসেন। মাঝ এপ্রিলে দুই দফা হামলার পর পাকসেনারা রাজারহাট দখলে নেয় এবং তাদের দোসরদের সহযোগিতায় এখানে নির্মম হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালায়।

তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত প্রতিরোধ থেমে থাকেনি। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ষ্ঠ মাউন্টেড ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার যোশীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী পাক-হানাদারদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট সম্পূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত হয়।