বাজারে তুলনামূলক অপ্রচলিত ‘মথ’ ডাল নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বাজারে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখেছে, এই ডালকে ক্ষতিকর রঙ মেশিয়ে ‘মুগ ডাল’ নামে বিক্রি করা হচ্ছে। সতর্কীকরণ হিসেবে সংস্থাটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এবং সরকারি ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।
মথ ডালের উৎস ও বৈশিষ্ট্য
মথ ডাল মূলত ভারতের স্থানীয় একটি ডালজাত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এটি খরা সহনশীল এবং সিংহভাগ উৎপাদন হয় ভারতের রাজস্থান রাজ্যে। রাজস্থানে ২০২৩–২৪ মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ ১৯ হাজার টন মথ ডাল উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রেও সীমিতভাবে উৎপাদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে মথ ডাল মূলত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে মথ ডাল আমদানি শুরু হয় ২০২৪ সালে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম চালান ২৩ জানুয়ারি রাজশাহীর বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিল হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে, যেখানে ৬২ টন মথ ডাল ছিল। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২০,৬৯১ টন মথ ডাল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০৮ শতাংশ বৃদ্ধি। বর্তমানে দেশজুড়ে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান মথ ডাল আমদানি করছে।
মথ ডাল কেন মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি হয়
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, মথ ডাল লম্বা এবং মুগ ডাল কিছুটা গোলাকার হলেও হলুদ রঙ মেশালে শনাক্ত করা কঠিন। মুগ ডালের তুলনায় মথ ডালের আমদানি খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এটিকে মুগ ডাল নামে বিক্রি করছেন। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মুগ ডালের আমদানি কেজিতে ১৩৩ টাকা, আর মথ ডালের কেজি ১০৪ টাকা। খুচরায় মুগ ডালের দাম ১৫০–১৬০ টাকা, যেখানে মথ ডাল মুগ ডাল নামে বিক্রি হয় ১৩০–১৪০ টাকায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে গড়ে বছরে ৪৫ হাজার টন মুগ ডাল উৎপাদিত হয় এবং ৩০ হাজার টন আমদানি হয়। তবে মথ ডাল আমদানি শুরু হওয়ার পর মুগ ডালের আমদানি কমে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মুগ ডাল আমদানি মাত্র ২১৩ টন, যেখানে মথ ডাল আমদানি হয়েছে ৬,৭৯৯ টন।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর আমদানিকৃত ডাল পরীক্ষা করে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি হওয়া ৩৩টি নমুনার ১৮টিতে ‘টারটাজিন’ হলুদ রঙের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এরপর থেকে বাজারে রং মেশানো ডালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ৫ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনী বাজারে দুই ব্যবসায়ীকে লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া গণমাধ্যমে বলেন, ডাল বা যেকোনো শস্যদানায় রং মেশানো অনুমোদিত নয়। টারটাজিন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমদানির সময় মুগ ও মথ ডালে রং পরীক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং রং মিশানো ডাল যাতে আমদানি না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।