ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন বা ICE ব্যবহার করে চালানো হয় গাড়ি, উড়োজাহাজ, জাহাজ এবং ট্রেন।
জ্বালানির উপর ভিত্তি করে ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। পেট্রোল বা গ্যাসোলিন ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন এবং গ্যাস ইঞ্জিন।
ইঞ্জিনের ভিতরে নানা ধরনের যন্ত্রাংশ থাকে। তবে শক্তি উৎপাদনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে ভিতরে থাকা সিলিন্ডার এবং পিস্টন।
সিলেন্ডার হচ্ছে ইঞ্জিনের ভিতরে থাকা এক ধরনের ফাঁপা জায়গা। আর সিলেন্ডারের ভিতর যেটা ওঠা নামা করে সেটাকে বলা হয় পিস্টন।
এর সহজ উদাহরন হিসেবে সাইকেলে হাওয়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করা পাম্পার গুলোর কথা বলা যায়।
পাম্পার গুলোর লম্বা টিউবের ভিতর একটি দন্ড ওঠানামা করানোর মাধ্যমে চাকায় হাওয়া দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে পাম্পারের লম্বা টিউবটি সিলেন্ডার এবং ওঠানামার কাজে ব্যবহার করা দন্ডটি হচ্ছে পিস্টন।
ইঞ্জিনের ভিতর একাধিক সিলেন্ডার থাকে।
মূলত সিলিন্ডার গুলোর ভিতরে ফুয়েল এবং বাতাস পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করা হয়।
চালু করার সাথে সাথে সিলেন্ডারের ভিতর থাকা পিস্টনটি উপর নিচ ওঠা নামা করতে থাকে, যার সাথে গাড়ির চাকা ও ঘুরতে থাকে।
পিস্টনের এরকম ওপর নিচ ওঠানামাকে বলা হয় স্ট্রোক। স্ট্রোকের ভিত্তিতে ইঞ্জিন দু ধরনের হয়ে থাকে।
ইঞ্জিনের ভিতর ফুয়েল পুড়ানোর সময় যেই ইঞ্জিনের চারটি স্ট্রোক তৈরি হয় তাকে বলা হয় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন।
অন্যদিকে যেই ইঞ্জিন গুলোর ক্ষেত্রে দুটো স্ট্রোক তৈরি হয় তাকে বলা হয় টু স্ট্রোক ইঞ্জিন।
ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদনের জন্য ফুয়েল পুড়ানোর ক্ষেত্রে যে চারটি স্ট্রোক সম্পূর্ণ করতে হয় সেগুলো হলো ইনটেক স্ট্রোক, কম্প্রেশন স্ট্রোক, পাওয়ার স্ট্রোক বা কম্বাশন স্ট্রোক এবং এক্সহস্ট স্ট্রোক।
ইঞ্জিন চালু হওয়ার সাথে সাথে যখন ইঞ্জিনে ফুয়েল প্রবেশ করে তখন পিস্টনটি নিচে নেমে যায়। এটাকে বলা হয় ইনটেক স্ট্রোক।
পরবর্তীতে পিস্টনের অতিরিক্ত শক্তির কারনে এটি আবার উপরে ওঠে এসে সিলেন্ডারের ভিতরে থাকা ফুয়েল গুলোকে সংকুচিত করে। এটাকে বলা হয় কম্প্রেশন স্ট্রোক।
ফুয়েল সংকুচিত হওয়ার কারনে সেগুলোর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এবং সিলেন্ডারের উপরে লাগানো স্পার্ক প্লাগ থেকে স্পার্ক হয়ে ফুয়েলে আগুন ধরে যায়।
আগুন লাগার ফলে ইঞ্জিনের মধ্যে একটা ব্লাস্ট হয়। যার সাথে সাথে পিস্টনটি আবার সজোড়ে নিচে নেমে আসে। এটাকে বলা হয় পাওয়ার স্ট্রোক বা কম্বাশন স্ট্রোক।
এরপর পিস্টনের শক্তির কারনে সেটি আবার ওপরে ওঠে আসে। এর ফলে ব্লাস্টের কারনে সৃষ্ট ধোঁয়া গুলো সিলেন্ডারের সাথে লাগানো একটি বাল্বের সাহায্যে ইঞ্জিন থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।
আর ধোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় নিষ্কাশন বা এক্সহস্ট স্ট্রোক।
আর টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাওয়ার স্ট্রোক এবং এক্সহস্ট স্ট্রোকের মাধ্যমেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়।
তবে দুটোর মধ্যে পার্থক্য হলো ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনে একবার ফুয়েল পুড়ানোর ফলে চারবার স্ট্রোক করানো হয়, ফলে চাকা চারবার ঘোরে।
অন্যদিকে টু স্ট্রোক ইঞ্জিনে একবার ফুয়েল পুড়িয়ে দুবার স্ট্রোক করানোর ফলে চাকা দুইবার ঘোরে।
ফলে টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের চাইতে ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনে ফুয়েল কম খরচ হয়। কিন্তু শক্তির দিক থেকে আবার টু স্ট্রোক ইঞ্জিন এগিয়ে।
কারন টু স্ট্রোকে দুটি স্ট্রোকের মধ্যে একবার পাওয়ার স্ট্রোক হয় অন্যদিকে ফোর স্ট্রোকে প্রতি চারটি স্ট্রোকে একটি পাওয়ার স্ট্রোক হয়।
পেট্রোল ইঞ্জিনে যখন ফুয়েল প্রবেশ করে তখন ফুয়েলের সাথে কিছুটা বাতাস ও প্রবেশ করে।
কিন্তু ডিজেল ইঞ্জিনে প্রথম স্ট্রোকে কোনো ফুয়েল প্রবেশ করে না শুধু বাতাস প্রবেশ করে।
এক্ষেত্রে বাতাস পিস্টনটিকে নিচে নামায়, আবার পিস্টনটি ওপরে ওঠার সময় বাতাসকে সংকুচিত করে।
এরপর সেটি উত্তপ্ত হলে ইনজেক্টর দিয়ে ডিজেল স্প্রে করা হয় । ফলে আগুন জ্বলে ওঠে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে।