স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ হলো এমন কোনো বস্তু যা তার চাইতে বড় কোনো বস্তুকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে।
চাঁদ আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। তবে সেগুলো প্রাকৃতিক উপগ্রহ।
মহাশূন্যে প্রাকৃতির উপগ্রহের পাশাপাশি মানুষের তৈরি বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট বা কৃত্তিম উপগ্রহ ও রয়েছে।
যেগুলোর কোনোটি পৃথিবীর ছবি তুলে, কোনটি অন্যকোনো গ্রহের ছবি সংগ্রহ করে। কোনোটা আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ঘূর্নিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কাজ করছে।
আবার কিছু স্যাটেলাইট ব্যবহার হচ্ছে টেলিভিশন সিগন্যাল, জিপিএস সিস্টেম এবং ফোনকলের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে।
১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমবারের মত সফলভাবে স্পুটনিক ১ স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করেছিলো।
এরপর বিশ্বের অনেক দেশই মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে। মহাকাশে বর্তমানে কয়েক হাজার স্যাটেলাইট বা কৃত্তিম উপগ্রহ রয়েছে।
স্যাটেলাইট মূলত তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের কাজ করে থাকে। কাজের ধরন অনুযায়ী এক এক স্যাটেলাইটে এক এক ধরনের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।
তবে প্রত্যেক স্যাটেলাইটে দুটি কমন যন্ত্রাংশ হলো অ্যান্টেনা এবং পাওয়ার সোর্স।
এছাড়াও কাজের ধরন অনুযায়ী স্যাটেলাইট গুলোতে কমান্ড এন্ড ডাটা হ্যান্ডেলিং, গাইডেন্স এন্ড স্টাবিলাইজেশন, থার্মাল কন্ট্রোল, হাউজিং ও ট্রান্সপন্ডারের মত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।
কিছু কিছু আবার ক্যামেরা ও সাইন্টিফিক সেন্সরও ব্যবহার করা হয়।
পৃথিবী থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে স্যাটেলাইট গুলোতে তথ্য পাঠানো হয়। যেগুলো অ্যান্টেনার সাহায্যে গ্রহন করে স্যাটেলাইট গুলো এমপ্লিফাই করে আবার পৃথিবীতে প্রেরন করে।
তবে স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে পাঠানো সিগন্যাল অনেক দূর্বল হয়ে থাকে। যার কারনে এগুলোকে ডিস অ্যান্টেনার সাহায্যে কেন্দ্রীভূত করে রিসিভার দিয়ে গ্রহন করে প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো হয়।
রকেটের সাহায্যে স্যাটেলাইট গুলোকে নিদিষ্ট স্থানে স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে এগুলো পৃথিবী বা অন্য কোনো গ্রহ, নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ছিটকে না গিয়ে কেনো প্রদক্ষিণ করতে থাকে?
সাধারণত যখন পৃথিবীর টান ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয় তখনই কোনো স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে।
তারমানে যখন গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স ও সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স বিপরীতভাবে একটি স্যাটেলাইটের উপর কাজ করে তখন সেটি নিদিষ্ট কক্ষপথে চলে।
অন্যথায় স্যাটেলাইটটি মহাশূন্যে সরল রেখায় চলবে নয়তো পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে।
কাজের ধরন অনুযায়ী স্যাটেলাইট গুলোকে তিনটি কক্ষপথ বা অরবিটে ভাগ করা হয়।
এগুলো হলো লোয়ার আর্থ অরবিট, মিডিয়াম আর্থ অরবিট এবং জিওসিনক্রোনাস অরবিট।
স্যাটেলাইটের কক্ষপথকে ভাগ করার অন্যতম কারন হলো আমাদের পৃথিবীকে ঘিরে থাকা ভ্যান অ্যালেন বেল্ট।
এটি একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড যা সূর্য থেকে আগত বিভিন্ন রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডে প্রচুর পরিমানে রেডিয়েশন থাকে।
যেগুলো স্যাটেলাইটের সেন্সরকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এর থেকে বাঁচতে স্যাটেলাইট আলাদা আলাদা অরবিটে স্থাপন করা হয়।
কোনো স্যাটেলাইটকে যখন পৃথিবীর জলবায়ু সম্বন্ধীয় কোন তথ্য বা জিওগ্রাফিক্যাল তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয় তখন সেটাকে লোয়ার আর্থ অরবিটে স্থাপন করা হয়।
যা পৃথিবী থেকে ১৬০ কিলোমিটার থেকে ২ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে স্থাপন করা স্যাটেলাইট মাত্র দেড় ঘন্টার মত সময়ে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে ফেলতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হলো এতে পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গা কাভার করতে পারে না।
আর এই সমস্যা দূর করতে স্থাপন করা হয় জিও সিনক্রোনাস অরবিটে। যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে।
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়না।
এর কারন উৎক্ষেপনের সময়ই সেগুলো যাতে একটি আরেকটিকে এড়িয়ে চলতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়।
এছাড়াও নাসা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো প্রতিনিয়তই স্যাটেলাইট গুলোর উপর নজর রাখে যাতে সেগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ না হয়।