ইন্টারনেট ছাড়া বর্তমানে আমাদের জনজীবন কল্পনাই করা যায় না। আর এই ইন্টারনেট আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে সাবমেরিন ক্যাবল।
সাব মানে হলো নিচে আর মেরিন মানে সমুদ্র। অথ্যাৎ সাবমেরিন ক্যাবল দ্বারা সমুদ্রের নিচে অবস্থিত কোনো তারকে বুঝায়।
বর্তমানে বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ট্রাফিকের নিরানব্বই শতাংশই সাবমেরিন ক্যাবলের উপর নির্ভরশীল।
বিশ্বব্যাপী একাধিক সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে। যেগুলো একদেশ থেকে শুরু করে অন্যদেশ, এক মহাদেশ থেকে শুরু করে অন্য মহাদেশ তথা পুরো বিশ্বকে যুক্ত করেছে।
প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলটি সফল ভাবে স্থাপন করা হয়েছিলো ১৮৫৮ সালে।
ট্র্যান্স-আটলান্টিক নামক সেই ক্যাবলটি ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিগ্রাফের সংকেত আদান প্রদান করা হতো।
যা পরবর্তীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বিশ্বে বর্তমানে চারশো ছয়টির বেশি সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে। যেগুলো প্রায় বারো লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
এক একটি সাবমেরিন ক্যাবল বিশ থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকতে পারে।
সমুদ্রের নিচে ক্যাবল গুলোকে প্রচন্ড রকমের পানির চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে হয়।
পাশাপাশি বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে এর ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থাকে। এমনকি জাহাজের নোঙ্গরের কারনে ও এগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
এগুলোকে যে কোনো রকমের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে আট স্তর বিশিষ্ট করে তৈরি করা হয়।
যার মধ্যে সাতটিই কাজ করে নিরাপত্তা স্তর হিসেবে। আর একদম ভিতরের স্তরটি অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিশনের কাজ করে থাকে।
সমুদ্রের নিচে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা বিশ্বের অন্যতম কঠিন কাজ গুলোর একটি। এর জন্য কাজ করে বিশেষ ধরনের কিছু জাহাজ।
সাবমেরিন ক্যাবল মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে থাকে। ধাপ গুলো হচ্ছে টিয়ার 1, টিয়ার 2 এবং টিয়ার 3।
যে সকল কোম্পানি নিজ খরচে সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে তারা হচ্ছে টিয়ার 1। এরা কোনো দেশের লোকাল কোম্পানি গুলোর কাছে ইন্টারনেট বিক্রি করে।
টিয়ার 2 হলো লোকাল সিম কার্ড কোম্পানি এবং বড় বড় ইন্টারনেট পাবলিশাররা। সর্বশেষ টিয়ার 3 হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকাল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বিনামূল্যে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে ও
তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি।
ফলে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগও হারাতে হয়েছিলো।
পরবর্তীতে ২০০৬ সালে প্রায় সাতশো পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় করে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ দুটো সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত আছে।
২০০৮ সাথে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো প্রায় সাত লাখ।
আর তখন ইন্টারনেট ব্যবহার হতো মাত্র আট জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।
কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় এগারো কোটি। যারা প্রায় ২৭০০ শো জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করছে।
তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির কারনে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে চাহিদার পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ছয় হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথে।
সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে, যা চালু হবে ২০২৪ সালে।