দেশে চালু হতে যাচ্ছে জাপানী শিক্ষা পদ্ধতি 'কুমন'। নতুন বছরের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
চলতি বছর পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তিত বিষয়বস্তু ও বিন্যাসের পাশাপাশি, শেখানো ও মূল্যায়নের ধরনে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
যার ধারাবাহিকতায় পরিক্ষামূলক ভাবে দেশে চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় জাপানী শিক্ষা পদ্ধতি 'কুমন'।
নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতি আসলে কি? এটি কিভাবে কাজ করে? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এটি কতটা পরিবর্তন আনতে পারে?
ইতোমধ্যেই, নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নেটিজেনদের মাঝে।
জাপানী এই শিক্ষা পদ্ধতি মূলত এক ধরনের প্রতিযোগীতা ও মানসিক চাপমুক্ত শিখন পদ্ধতি।
যা গতানুগতিক ক্লাসরুম কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি চাইতে আলাদা।
এটি এমন একটি শিখন পদ্ধতি যেখানে,
একজন ইনস্ট্রাক্টর বা শিক্ষকের অধীনে
শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ে শেখার কাজটি নিজেকেই করতে হয়।
এটি পুরোপুরিভাবেই একটি গৃহভিত্তিক কর্মসূচি। যেখানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বেশিরভাগ কাজই বাড়িতে সম্পন্ন করতে হয়।
এক্ষেত্রে শ্রেণী শিক্ষক বা ইনস্ট্রাক্টর ,ক্লাসওয়ার্ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অনুযায়ী ,একটি ওয়ার্কশীট দিয়ে থাকেন।
যেগুলোতে, কোনো বিষয়ের একেকটা কনসেপ্টকে ভেঙ্গে ধাপে ধাপে বোঝানো হয়, এবং বোঝানো শেষে, উদাহরনসহ অনুশীলন দেয়া থাকে।
শিক্ষার্থীদের নিজে নিজে সেগুলো পড়ে- বুঝে -অনুশীলন করে ,সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি বুঝে, একই ধরনের অনেক গুলো সমস্যার অনুশীলন করার মাধ্যমে, ওই বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে।
ওয়ার্কশীট গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সেগুলো শিক্ষার্থীদের দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে, আবার একই সাথে সমাধানযোগ্যও হয়।
ওয়ার্কশীট গুলো সমাধানের জন্য নিদিষ্ট সময় দেয়া থাকে, যেই সময়ের ভিতর সেটা সমাধানের চেষ্টা করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এগুলো সমাধান করতে দেয়ার সময়, ইনস্ট্রাক্টর শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ততটুকু দিকনির্দেশনাই দিয়ে থাকেন, যতটুকু ওয়ার্কশীটটি সমাধান করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে।
এই পদ্ধতি অনুসরন করার কারন হলো- যখন কেউ কোনো একটি অজানা সমস্যার সমাধান নিজে নিজেই করার চেষ্টা করে, তখন সে বারবার ব্যার্থ হবে।
কিন্তু ধীরে ধীরে একটা সময় ঠিকই সমাধান করতে পারবে। যদিও তা করতে গিয়ে কিছুটা সময় লেগে যায়, এমনকি হতাশাগ্রস্তও হয়ে পড়ে অনেকে।
কিন্তু যখন সফলভাবে তা সমাধান করতে পারে, তখন নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
যা পরবর্তীতে ,আরো বড় সমস্যা সমাধানে অনুপ্রেরণা যোগায়। কোনো কিছু নিজে নিজে শেখার আগ্রহ তৈরি করে।
শিক্ষার্থীদের কোনোকিছু শেখানোর জনপ্রিয় এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, জাপানী গণিত শিক্ষক তরু কুমন।
নিজের প্রাইমারী স্কুল পড়ুয়া ছেলের অংকে দূর্বলতা দূর করার জন্য, তাকে বিভিন্ন বিষয়ে হাতে লিখা এমন ছোট ছোট ওয়ার্কশীট দিয়েছিলেন তিনি।
ছেলেকে নিয়মিত ৩০ মিনিটের জন্য একেকটি ওয়ার্কশীট, সমাধান করতে দিতেন।
দিনের পর দিন এই পদ্ধতিতে অনুশীলন করতে করতে, অংকে দক্ষ হয়ে ওঠে সে।
ধীরে ধীরে নিজের ক্লাসের পড়া শেষ করে, উপরের ক্লাসের সমস্যা সমাধানেও পারদর্শী হয়ে উঠে। এমনকি, প্রাইমারি স্কুল শেষে ক্যাকুলাসের বিভিন্ন ইকুয়েশনের সমাধানও আয়ত্ত করে নেয়।
নিজের সন্তানের উন্নতি দেখে ১৯৫৮ সালে , 'তরু কুমন' জনপ্রিয় এই শিখন পদ্ধতি চালু করেন। যা ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বর্তমানে বিশ্বের ৬০ টি দেশের ১৪ হাজারেরও বেশি স্কুলে, এই শিখন পদ্ধতি চালু রয়েছে।
জনপ্রিয় এই পদ্ধতি আমাদের দেশে ছড়িয়ে দিতে, এবছর থেকেই আইসিটি বিভাগের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে এটি চালু করা হচ্ছে।
পাশাপাশি আরো ৬ টি স্কুল অফ ফিউচারে, এর পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
পরবর্তীতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০০ টি স্কুলে ,পুরোদমে শুরু হবে আনন্দদায়ক এই শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই পদ্ধতি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মাঝে, কোনো কিছু আনন্দ সহকারে শেখার আগ্রহ তৈরি করে, ঠিক তেমনি তাদের চাপমুক্তভাবে শিখতেও সাহায্য করে।
কারন বাড়িতে নিজে নিজে চেষ্টা করে ,বিভিন্ন ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করে, কোনো কিছু যেভাবে শিখা সম্ভব, ক্লাসরুমে তেমনটা হয় না।
তবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও ,আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এটি কেমন সুফল বয়ে আনবে, বা আদো কার্যকর হবে কিনা- সেটিই এখন দেখার বিষয়।