জাতীয়

রাজনীতি বা মবের নামে দেশে নাশকতার সুযোগ নেই - সেনাবাহিনী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫
রাজনীতি বা মবের নামে দেশে নাশকতার সুযোগ নেই - সেনাবাহিনী
রংপুরে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "রাজনীতির নামে কিংবা মবের মাধ্যমে নাশকতার আর কোনো সুযোগ নেই।" তিনি আরও জানান, রংপুর তথা দেশের কোথাও সহিংসতা, ভাংচুর বা গঠনমূলক প্রতিবাদের আড়ালে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার রাতে রংপুর স্টেডিয়ামে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে এক বিশেষ বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় বিএনপি ও এনসিপির নেতারা অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এ বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম জানান, সেনাবাহিনী একমাত্র তখনই কঠোর হবে, যখন কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
বৈঠকে বিএনপি ও এনসিপির নেতারা হামলার ঘটনাকে "দুঃখজনক" ও "ভুল বোঝাবুঝির ফল" হিসেবে ব্যাখ্যা দেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে দায়িত্বশীল আচরণের প্রতিশ্রুতি দেন। নেতারা জানান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার জন্য তারা দলীয়ভাবে সচেষ্ট থাকবেন।
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, তারা অত্যন্ত আনন্দিত যে এনসিপি ও বিএনপির প্রতিনিধি দল স্বপ্রণোদিত হয়ে সেনা ক্যাম্পে এসেছে আলোচনায় বসতে। যেসব কর্মী আবেগপ্রবণ হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাদের বিষয়ে দল আগ্রহ দেখিয়েছে এবং সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, রংপুর শহরকে শান্তির শহর হিসেবে ধরে রাখার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সহনশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যারা আইন ভঙ্গ করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, "আপনি আমাকে তখনই কঠোর অবস্থানে দেখতে পাবেন, যখন আপনি নিয়মের ব্যতয় ঘটাবেন। আমি চাই, আপনাদের সঙ্গে সবসময় হাসিমুখেই থাকতে।" এঘটনার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যেন শিক্ষা গ্রহণ করেন, এটাই তাদের প্রত্যাশা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাইয়ুম একথাও বলেন যে, দেশের শান্তি ও অগ্রগতির জন্য এখন প্রয়োজন সম্মিলিত ও সচেতন সাংগঠনিক ভূমিকা। সাম্প্রতিক অপ্রীতিকর ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কেবল রংপুর নয়, দেশের কোথাও যেন আর না ঘটে। শুধু শান্তি বজায় রাখা নয়, বরং রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো যেন নিয়ম মেনেই পালিত হয়, সেটাই এখন সময়ের দাবি।
সভায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করলে কারোই ছাড় নেই। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ভবিষ্যতে যেন কেউ জড়িত না হয়, সে জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যের আগে বৈঠকে বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি প্রমুখ। তাঁরা সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সহিংসতা এড়িয়ে চলার আশ্বাস দেন।
সেনাবাহিনীর এ ধরনের সরাসরি সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে রাজনৈতিক মহল এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও। সবার প্রত্যাশা, রংপুর সহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে এ ধরনের সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।