জাতীয়

মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা গোলাবারুদের শব্দে কেপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা গোলাবারুদের শব্দে কেপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো
মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা গোলাবারুদের শব্দে কেপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো। বান্দরবান এবং কক্সবাজারে চলছে তীব্র আতঙ্ক। বিগত কয়েকদিন থেমে থেমে গোলাবর্ষণ চললেও শনিবার রাত থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। রাতভর চলমান সংঘর্ষে সীমান্তবর্তী ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক আতঙ্ক। বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম। সীমান্তের কাছাকাছি থাকা সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকরা সময় পার করছেন আতঙ্কে। 

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে। গোলাবারুদ আর বিস্ফোরকের বিকট শব্দে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। শনিবার বিকালে থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি হলেও রোববার ভোর রাত থেকে লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে ওঠে সীমান্তবর্তী এলাকা। গোলাগুলির সময় রকেট লান্সার উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকায় বসতঘরের উপরও। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। অনেকেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজ করতেও ভয় পাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা দুজনেই তুমব্রু সীমান্তের হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। গোলাগুলিতে কোনাপাড়ার কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  এদিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে প্রাণহানির শঙ্কায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপির ১৪ জনেরও বেশি সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্ত পথে আরও ৩০ জনেরও বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।এদিকে উদ্ভূত এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। স্বস্তিতে নেই কক্সবাজারের সীমান্তে থাকা মানুষরাও। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা দেশ মিয়ানমারের ভেতরে কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না নাফ নদীর এপারের মানুষ। তারা কেবল গোলাগুলির শব্দ শুনছেন, আকাশে হেলিকপ্টার দেখেছেন। এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংসহ সীমান্ত এলাকার মানুষ।

বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ছোড়া ১৩টি মর্টার শেল ও একটি বুলেট বাংলাদেশের মাটিতে এসে পড়েছে।এদিকে মিয়ানমারের চলমান সংঘাত নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, আরাকানে যে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ চলছে, এটা সীমান্তে চলে এসেছে। আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, তবে গোলাগুলির কারণে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চীনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। তারা এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।