৮৩ হাজার শ্রমিক নেবে ইউরোপের দেশ ইতালি। সিজনাল ও নন-সিজনাল দুই রকম ভিসা প্রদান করছে দেশটি। বাংলাদেশ’সহ মোট ৩৩টি দেশের নাগরিকরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২৭ মার্চ সকাল থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। অনলাইনে এই আবেদন জমা নেওয়া হবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বর্তমানে, শ্রমিক সংকটে ভুগছে ইতালি। কোভিডের সময় বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যুসহ নানা কারণে দেশটিতে দেখা দিয়েছে জনশক্তির ঘাটতি। এ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নিতে চাচ্ছে তারা। এ কারণে এ বছর শ্রমিক চেয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে দেশটি। ইতালিতে মূলত ২ ভাগে নেওয়া হবে শ্রমিক। একটি সিজনাল ভিসা অন্যটি নন-সিজনাল ভিসা প্রদানের মাধ্যমে। সিজনাল ভিসা দিয়ে ৪৪ হাজার শ্রমিক নেবে দেশটি। এর মধ্যে শুধুমাত্র কৃষিকাজের জন্য নেওয়া হবে ২২ হাজার শ্রমিক। যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ করতে আগ্রহী, তারা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। বাকিরা অন্যান্য সিজনাল কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।অন্যদিকে, নন সিজনাল ভিসায় অর্থাৎ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আরো ৩৮ হাজার ৭০৫ জন শ্রমিক ইতালিতে যেতে পারবেন। এর বাইরে কনস্ট্রাকশন, জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, মেকানিক্স, টেলিযোগাযোগ সহ এসব সেক্টরে ৩০ হাজারের বেশি কোটা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
শ্রমিক হিসাবে ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাসপোর্টের ফটোকপি এবং দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে দক্ষতার সনদ দরকার হবে। প্রতি শ্রমিকের আবেদনের জন্য খরচ হবে ১৬ ইউরো বা বাংলাদেশী টাকা ১৮০০ টাকার মতো। এর বাইরে কেউ যদি আবেদন ফরম পূরণ করতে হেল্প ডেস্কের সাহায্য নেন, এর জন্য আরও ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো খরচ হতে পারে।পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যাবে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভিসার অনুমোদনপত্র আসতে, প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
সিজনাল শ্রমিকদেরকে সাধারণত ৯ মাসের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হয়। যদি কেউ ফিরে না যান, তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মুখোমুখি হতে হয় কঠিন শাস্তির।সিজনাল ভিসায় ইতালি যাওয়ার পর, অধিকাংশ শ্রমিক সঠিক সময়ে ফিরে না যাওয়ার অপরাধে, ইতালি সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রায় ৯ বছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা গত বছর তুলে নেওয়া হয়েছে।
ইতালির আইন অনুসারে, যেকোনো শ্রমিক ৯ মাসের বেশি ইতালিতে অবস্থান করলে তিনি অবৈধ হয়ে যান। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকরা ৯ মাসের ভিসায় এসে দেশে ফেরত যান না, এছাড়া আইন অমান্যসহ বিভিন্ন কারণে ইতালি সরকার বাংলাদেশের কোটা বাতিল করে রেখেছিলেন।
এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের দাবি, তারা বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইতালি যেতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেন, তা মাত্র ৯ মাস কাজ করে পোষানো যায় না।
এছাড়া, অনেক শ্রমিকের কাছে সঠিক তথ্য পর্যন্ত থাকে না। তৃতীয় পক্ষ তাদেরকে ভুল তথ্য দেয়। অনেক টাকা খরচ করে ইতালি পৌঁছানোর পর তারা জানতে পারেন, ৯ মাস পর তাদেরকে ফেরত যেতে হবে। বড় খরচের কথা মাথায় রেখে অবৈধ অভিবাসী হয়েই তারা ইতালিতে থেকে যান।
আর একবার যখন তারা অবৈধ অভিবাসী হয়ে যান, তখন ইতালির নিয়োগদাতারা তাদের কোনো কাজে নিয়োগ দেন না। কারণ সে দেশে অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
ফলে, দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীরা হকারির জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন। দেশটির বড় শহর বা পর্যটন এলাকায় ফুলসহ বিভিন্ন জিনিস ফেরি করেন এবং সারাক্ষণ চোর-পুলিশ খেলায় মধ্যে থাকেন।
এর আগে ২০০১ সালে ৩০ হাজার লোককে ওয়ার্ক পারমিট দিয়েছল ইতালি। ২০২২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৬৯ হাজার ৭০০ এবং ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮২ হাজার ৭০৫ জন।
বিগত বছরে দেশ প্রতি নির্দিষ্ট কোটা বেঁধে দেওয়া হলেও এ বছর তা করা হয়নি। অর্থাৎ কোন দেশ থেকে কত শ্রমিক ইতালিতে যেতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।
ফলে এখনও বলা সম্ভব হচ্ছে না দেশটি বাংলাদেশ থেকে ঠিক কতজন শ্রমিক নিবে।