বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আগামী ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ এদিনে শুনানি করবে। সোমবার, ৪ নভেম্বর, খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে মামলার অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের এই রায়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যেখানে অভিযোগ ছিল যে অরফানেজ ট্রাস্টের নামে টাকা তুলে তা আত্মসাৎ করা হয়।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং মমিনুর রহমান আছেন। তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে আপিল করে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি করেন। খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা সেখানে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। এ রায়ের পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগের কাছে লিভ টু আপিল দাখিল করেন, যেখানে তারা হাইকোর্টের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিলের সুযোগ চাইছেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই লিভ টু আপিলের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার প্রয়াসে কাজ করছেন। তারা উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এবং সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি। খালেদা জিয়া এবং তার সমর্থকদের মতে, এ রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং এর মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দলের নেতারা মনে করেন, এ রায়ের মাধ্যমে দলীয় প্রধানকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং এ পদ্ধতি বিচার ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, ১০ নভেম্বরের শুনানিতে খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার পাবেন এবং তার মুক্তির পথ সুগম হবে।
লিভ টু আপিলের এই শুনানির ফলাফলের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ। যদি আপিল বিভাগে তিনি মুক্তি পান, তবে তা তার রাজনৈতিক জীবনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, যদি শুনানি তার বিরুদ্ধে যায়, তবে তার মুক্তির সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে এই প্রভাব বহুমাত্রিক হতে পারে।
এই শুনানি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। আগামী ১০ নভেম্বরের শুনানিতে আপিল বিভাগ কী রায় দেয়, তা নিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে।