দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা—তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ভয়ভীতি, দমনপীড়ন ও বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করে।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দলীয় স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, এ কে এম নূরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক আইজিপিরাও।
তিনটি নির্বাচন নিয়েই বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে আসছে—২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়, ২০১৮ সালের ‘ভোটের আগের রাতে ভোট’ ও ২০২৪ সালের ‘আমি আর ডামি’ নাটকীয়তা নিয়ে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই মামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে, ইতিমধ্যে এ কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার পথ সুগম হয়েছে, এবং সেই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নির্দেশনায় এই মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই মামলা শুধু নির্বাচনী অনিয়ম নয়, বরং গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থায় আস্থাহীনতার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।