তথ্যপ্রযুক্তি

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিমানের আকৃতির এক গ্রহাণু!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিমানের আকৃতির এক গ্রহাণু!
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিপদ। পাঁচ-পাঁচটি গ্রহাণু দল বেধে ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে। এর মধ্যে একটি গ্রহাণুর আকৃতি বিমানের সমান। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এই গ্রহাণু আঘাত হানলে পৃথিবীর অনেকাংশে ক্ষতি হতে পারে। বিকট আওয়াজ তৈরি হতে পারে মহাবিশ্বে।৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পৃথিবীতে আঘাত হানতে  পারে এটি। অতিকায় এই গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে ঘণ্টায় ৬৭ হাজার ৬৫৬ কিলোমিটার বেগে।পৃথিবীর কানের পাশ দিয়ে অনেক গ্রহাণু ছুটে গেলেও, পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণু আঘাত হানার সম্ভাবনা খুব বেশি, এমনটাই পূর্বাবাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 

নাসা জানিয়েছে যে, পাঁচটি গ্রহাণু পৃথিবীর সংস্পর্শে আসবে এবং দুটি সবচেয়ে কাছে চলে আসছে, যে কারণে ধাক্কা খেতে পারে পৃথিবীর সঙ্গে। গ্রহাণুর গতিবিধির দিকে নজর রাখছে নাসা।গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী লন্ডভন্ড হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে দৈত্যাকার এক উল্কাপিণ্ডের তান্ডবে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসরের প্রজাতি।গবেষকরা মনে করেন পৃথিবীতে ১২ কিলোমিটার পরিধির গ্রহাণুর আঘাতে, যে বিস্ফোরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছিল সেটাই ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কারণ।

কিন্তু কী হবে যদি সেরকম কোনো গ্রহাণু আবারও পৃথিবীতে আঘাত হানে?ধারণা করা হয়, ১৬০ মিটার চওড়া কোনো গ্রহাণু যদি পৃথিবীর জনবহুল কোনো এলাকায় আঘাত হানে তাহলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হবে। মারা যাবে হাজার হাজার মানুষ।আর ১ কিলোমিটারের চেয়ে বড় আকারের গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে তাতে বিশ্বজুড়েই ক্ষয়ক্ষতি হবে।১৯০৮ সালে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে গ্রহাণুর আঘাতে ৭৭০ বর্গকিলোমিটার বন পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মারা গিয়েছিল হাজার হাজার বন্যপ্রাণি। রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে ২০১৩ সালে মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গ্রহাণু আঘাত হানে। কিন্তু পাথর আকৃতির উল্কাপিণ্ডটি ছিল হিরোশিমায় আঘাত হানা ২০টা বোমার মতো শক্তিশালী।

যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কয়েক হাজার বাড়িঘর, সহস্রাধিক মানুষ আহত হলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।পৃথিবীর দিকে মাঝে মাঝেই ধেয়ে আসে অসংখ্য গ্রহাণু। আকারে আয়তনে ছোট হওয়ার কারণে  কখনো পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না সেগুলো।বছরে প্রায় একবার একটা গাড়ির আকারের গ্রহাণু আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারলেও মেসোস্ফিয়ার স্তরে এসে পুড়ে যায়।১০-১২ কিলোমিটার পরিধির কোনো গ্রহাণু কয়েক মিলিয়ন বছরে একবার পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে।১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার মাধ্যমে যে শক ওয়েব হবে, তাতেই পৃথিবীর একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 

পৃথিবী পৃষ্ঠে শত কিলোমটারজুড়ে একটি বিশাল গর্তের সৃষ্টি হবে। গ্রহাণুটির ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বাইরে একটি বলয় সৃষ্টি করবে, যা দেখতে শনি গ্রহের বলয়ের মতো হবে।গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী পৃষ্ঠ একসময় ধুলোতে ঢেকে যাবে, যা সূর্যের আলো আটকে দেবে। আর সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবীতে অধিকাংশ প্রাণী ও গাছপালা মারা যাবে। 

উল্কাপিন্ডের আঘাতে বনজঙ্গল জ্বলে যাবে, শহরগুলো ঝলসে যাবে উত্তপ্ত ধ্বংসাবশেষের উত্তাপে। মানুষসহ অন্যান্য সকল প্রাণির জন্য পৃথিবীতে বেচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে তা প্রতিরোধের মতো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কার হয়নি।

তবে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হাত গুটিয়ে বসে নেই। কিভাবে গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তন করে সংঘর্ষ এড়ানো যায়, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে তারা। মহাকাশেই গ্রহাণুগুলোকে ধ্বংস করতে বা এদের গতিপথ পরিবর্তন করতে একটি মহাকাশযান পাঠায়িছিলো মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা।যা মূলত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণুকে তার গতিপথ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবার জন্য তৈরি।