তথ্যপ্রযুক্তি

মহাকাশে নভোচারীরা কী খায়, কীভাবে খায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
মহাকাশে নভোচারীরা কী খায়, কীভাবে খায়
মহাকাশ এমনই এক জায়গা, যাকে নিয়ে সাধারণের কৌতুহলের শেষ নেই। মহাকাশে নেই কোনো রান্নার ব্যবস্থা। তাহলে কিভাবে দিন কাটে একজন মহাকাশচারীর? 

নভোচারীরা মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ভেসে বেড়ানো খাবার কীভাবে মুখে তোলেন, মহাকাশে নভোচারীরা কেমন জীবন কাটান, এসব নিয়েও নানা প্রশ্ন কৌতুহল আছে সাধারণ মানুষের।

বেঁচে থাকতে গেলে  যেহেতু খাবার খেতে হয়, সে আপনি আকাশে থাকুন, আর পাতালে থাকুন, বেঁচে থাকতে হলে  অবশ্যই খাবার খেতে হবে। নভোচারীদের ক্ষেত্রেও তাই। তাদেরও যে নিয়মিত খেতে হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নভোচারীরা আসলে কী খান, কিভাবেই বা খান?


মহাকাশচারীরা মহাকাশে গিয়ে ভিন্ন কোনো খাবার খান না, বরং পৃথিবীতে আমরা নিয়মিত যে খাবার খাই, প্রায় একই ধরণের খাবার তাঁরাও খেতে পারেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ ষ্টেশনের মেনুতে শাকসবজি, ফলমূল, মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে শুরু করে প্রায় শতাধিক খাবারের আইটেম থাকে।


নভোচারীদের রুটিন করে তিনবেলা খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। এছাড়াও যেকোনো সময় তাঁরা হালকা খাবার খেতে পারেন। তবে মহাকাশ সংস্থাগুলোর নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন তাঁদের ২ হাজার ৫০০ ক্যালরি শক্তি নিশ্চিত করতে হয়।


প্রতিটি মিশন শুরু হওয়ার আগেই নভোচারীদের খাবার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকায় খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। খাবার যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য বিজ্ঞানীদের হালকা, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও খেতে সহজ, এমন খাবার বাছাই করতে হয়।

শুকনো খাবারগুলো মহাকাশযানে পাঠানো হয় প্যাকেট করে। খাবার গরম করার জন্য থাকে একটি ওভেনও। আর শুকনো খাবারের পাশাপাশি প্রায় ২০ ধরনের পানীয়ের ব্যবস্থা থাকে নভোচারীদের জন্য।

তবে ১৯৬০-এর দশকের আগে নভোচারীদের খাওয়া-দাওয়ার প্রক্রিয়া এতটা সহজ ছিল না। তখন তাঁরা শুধু স্বাদহীন বিশুদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি ও মাংস খেতেন। 

১৯৬০-এর দশকের পরে নভোচারীদের জন্য হিমায়িত শুকনো খাবার সরবরাহ করা শুরু করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।  বর্তমানে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন ও তুলনামূলক সহজভাবে খাবার বানানো যায়।


ফলে পৃথিবীর মতো একইরকম খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে নভোচারীদের জন্য। এছাড়াও গ্রীন হাউজ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বর্তমানে মহাকাশে “রোমেইন লেটুস’ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। ভবিষ্যতে সব রকমের শাক-সবজিই মহাকাশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন আর মহাকাশচারীদের টাটকা শাকসবজি নিয়ে ভাবতে হবে না।  
মহাকাশে যেহেতু পানির কোনো উপস্থিতি নেই, তাই নভোচারীরা পৃথিবী থেকে অবশ্যই কিছু পানি সঙ্গে নিয়ে যান। সেই সাথে পানিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে আবার ব্যবহার করেন নানা কাজে।জ্বালানি কক্ষ, বাতাসের আর্দ্রতা, এমনকি প্রস্রাব থেকেও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি তৈরি করেন তাঁরা। 


“প্রস্রাব থেকে পানি” এটা শুনে হয়তো অনেকেই নাক সিটকাচ্ছেন, নাসা দাবি করছে এই রিসাইকেল করা পানি আমরা পৃথিবীতে যে পানি খাই তার থেকেও অনেক পরিষ্কার ও নিরাপদ।

এখন প্রশ্ন জাগে, এসব খাবার মহাকাশচারীরা কিভাবে খান? কারণ মহাকাশেতো কোনো মধ্যাকর্ষণ বল নেই। খাবার গুলো তো শূণ্যে ভেসে থাকার কথা। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে খাবার খাওয়ার জন্য মেঝের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত টেবিল-চেয়ারসহ একটি ডাইনিং রুম থাকে। নভোচারীরা তাঁদের পায়ের সাহায্যে চেয়ারের সঙ্গে নিজেদের আটকে রাখেন।

নভোচারীরা যেসব খাবার খায়, তা খুবই প্রক্রিয়াজাত এবং খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে সব পানি শুষে বের করে নেওয়া হয়। এরপর নভোচারীরা খাবার আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাতে গরম বা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নরম করে নেয়।

এরপর কাঁটাচামচ এবং ছুরি ব্যবহার করে চুম্বকীয় ট্রে থেকে খাবার খান। এছাড়াও খাবার খাওয়ার আগে নভোচারীদের খাবারের পেছনে থাকা বারকোড স্ক্যান করে খাবার নিতে হয়। আর পৃথিবীতে বসে মহাকাশচারীরা কে কোন খাবার খাচ্ছেন, সেই তথ্য যাচাই বাছাই ও তদারকি করেন অন্যান্য কর্মকর্তারা।