তথ্যপ্রযুক্তি

কেমন ছিল প্রথম আইফোন? দাম কত ছিল?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩
কেমন ছিল প্রথম আইফোন? দাম কত ছিল?
২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর একটি কনভেনশন সেন্টারের মঞ্চে উঠে স্টিভ জবস বলেন, "আজ আমরা সবাই মিলে ইতিহাস তৈরি করবো"।

সেই সময় তার হাতে ছিল, আইফোন নামে সম্পূর্ণ  নতুন এক ধরণের ডিভাইস, যা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। সেদিনই উন্মোচিত হয়েছিল প্রযুক্তির নতুন এক দুয়ার।

ডিভাইসটিতে ছিল একেবারে নতুন ধরণের টাচস্ক্রিন, সহজে ব্যবহার করা যায় এরকম ইন্টারফেস, আর সুন্দর ডিজাইন। সব মিলিযে দেখা গেল, একটা আইফোন হাতে থাকলে আপনার যেন আর কিছুরই দরকার নেই।

তবে মজার ব্যাপার হলো, অরিজিনাল ভার্সনে এমন অনেক ফিচার ছিলনা, যেগুলো এখন বাটন মোবাইলেও পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করলে, হয়তো হাসি এসে যেতে পারে আপনার।

বাজারে আসা প্রথম আইফোনে স্টোরেজ ছিল মাত্র ৪ জিবি। তবে কেউ চাইলে সেটি বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগও ছিল। ১০০ ডলার খরচ করলেই ৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ পাওয়া যেত।

টেক দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটানো মোবাইল ফোনটিতে ছিল, রুপালি রংয়ের এলুমিনিয়াম কেসিং। বর্তমানে মূল ফ্রেম এলুমিনিয়ামের হলেও, সামনে পিছনে আছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কাচ।

সেই সময়ে ডিভাইসটির পিছনে ছিল একটি মাত্র ক্যামেরা। যেটি দিয়ে আবার ছবি তুলতে পারলেও, ভিডিও করার সুবিধা ছিল না। 

অথচ এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৪ ক্যামেরার আইফোন। যার মধ্যে তিনটি থাকে ডিভাইসের পিছনের দিকে, চতুর্থটি হলো ফ্রন্ট ক্যামেরা।

এগুলো দিয়ে উন্নত মানের ছবি তোলার পাশাপাশি, 4k ভিডিও রেকর্ড করা যায়। পাওয়া যাচ্ছে DSLR এর মতো অটোফোকাস ও ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার সুবিধা।

মাত্র ১৫টি এপ ছিল আইফোনের প্রথম সংস্করনে। এগুলো আপডেট করার মতো কোন সুযোগ ছিল না তখন। ছিল না কোন ফ্ল্যাশ লাইট।

এপ স্টোর উন্মুক্ত হওয়ার পর, বেশ কিছু সফটওয়্যার পাওয়া যেত, যেগুলো ডিসপ্লের উজ্জলতা সর্বোচ্চ পরিমান বাড়িয়ে, অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করতো।

টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও পাঠানোর কোন ফিচার ছিল না ডিভাইসটিতে। শুধু মাত্র SMS করা যেত তখন। বিশেষ সুবিধাটি যুক্ত হয়েছে ২০০৯ সালে iPhone OS 3 তে।

নিশ্চিত করেই বলা যায়, কপি পেস্ট করা যায় না এমন কোন স্মার্টফোন, বর্তমান যুগে এসে কেউই কিনবে না। 

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২০০৭ সালে আইফোনে এই সুবিধাটি ছিল না। ২০০৯ সালে ‘আইফোন OS-3 ’এর মাধ্যমে অভিষেক হয় ফিচারটির। 

অরিজিনাল ভার্সন কেনার সময়ে, গুগল ম্যাপ ইনস্টলড অবস্থায় থাকতো। কিন্তু এতে সংযুক্ত ছিল না GPS সুবিধা। 
তাই এখনকার মতো কোন ধরনের ডিরেকশন পাওয়া যেত না সেই সময়টাতে।

প্রথম আইফোনের স্ক্রিন ছিল মাত্র সাড়ে তিন ইঞ্জি। ছিল না পানি সহ্য করার ক্ষমতা। 
অথচ লেটেস্ট মডেল গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে, IP68 রেটের water resistance সুবিধা। 

বর্তমান সময়ের কমদামি স্মার্টফোন গুলোতে পাওয়া যায়, এমন অনেক ফিচারও যুক্ত ছিল না আইফোনের অরিজিনাল ভার্সনে। 
তবে এপল সেই সময়কার সেরা প্রযুক্তিই, ব্যবহার করেছিল ডিভাইসটিতে।

তাই দামও ছিল সমসাময়িক অন্যান্য মোবাইলের তুলনায় অনেক বেশি। 
বাজারে আসা এপলের প্রথম ফোনের মালিক হওয়ার জন্য, আজ থেকে ১৬ বছর আগেই খরচ করতে হয়েছে ৪৯৯ ডলার।

মূল্য এত বেশি হওয়ার পরেও, রিলিজের পরপরই তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল পুরো বিশ্বে। মাত্র ৭৪ দিনে, ১০ লাখ আইফোন বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

আজ স্টিভ জবস বেচে নেই। এক যুগ আগে পৃথিবী ছেড়েছেন তিনি। কিন্তু ১৬ বছর পর, অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে, তার প্রথম দিনের সেই বানী।

এত দীর্ঘ সময় পরেও বিন্দু পরিমান কমেনি ব্র‍্যান্ডটির চাহিদা। 

২০১৮ সালে প্রায় ২২ কোটি আইফোন বিক্রি করেছে অ্যাপল। তবে এরপর থেকে, বিক্রি নিয়ে তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে বিশ্বের কোটি কোটি লোকের জীবনকে, প্রভাবিত করে চলেছে আইফোন।14 এর পর, এখন 15 সিরিজের অপেক্ষায় দিন গুনছেন গ্রাহকরা।