ধর্ম

বিশ্বনবী (সা.) পৃথিবীর যেই স্থানটিকে 'বেহেশতের বাগান' হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩
বিশ্বনবী (সা.) পৃথিবীর যেই স্থানটিকে 'বেহেশতের বাগান' হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন!
এই পৃথিবীরই একটি স্থানকে 'বেহেশতের বাগান ' হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন দো-জাহানের নেতা মহানবী (সা.)। এটি পৃথিবীর এমন একটি পবিত্র স্থান যার সঙ্গে বিশ্বের কোনকিছুরই তুলনা দেওয়া সম্ভব নয়। জান্নাতি আবহাওয়ায় সমৃদ্ধ এই স্থানটিকে মহান আল্লাহ তা'আলা সরাসরি স্থানান্তরিত করবেন বেহেশতে। 

মুসলিম উম্মাহদের তীর্থস্থান মদিনার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি রয়েছে মসজিদে নববির। সেখানেই সবুজ গম্বুজের নিচে অবস্থিত রয়েছে নবীজির সমাধিস্থল অর্থাৎ বিশ্বনবীর রওজা মোবারক।মহানবী (সা.)-এর রওজা মোবারক এবং মসজিদে অবস্থিত খুতবার মিম্বরের ঠিক মাঝ বরাবরের স্থানটিকেই মূলত বেহেশতের বাগান কিংবা রিয়াজুল জান্নাহ হিসেবে সম্বোধন করা হয়।বলা হয়ে থাকে, মসজিদে নববির ভেতরে অবস্থিত এই রিয়াজুল জান্নাহ'তে কোন মুমিন আল্লাহ'র কাছে কিছু চাইলে, মহান আল্লাহ পাক তাকে ফিরিয়ে দেননা। 

তাই বিশ্বের মুসলিম উম্মাহদের কাছে, রিয়াজুল জান্নাহ 'দোয়া কবুলের স্থান' হিসেবেও ব্যাপক সমাদৃত। প্রতি বছর হজ ও ওমরা করতে আসা লাখ লাখ মুসল্লিরা রিয়াজুল জান্নাহ'তে ভীড় জমান শুধুমাত্র  কিছুক্ষণ ইবাদত করার উদ্দেশ্যে। রহমতের এই স্থানে ইবাদতের ক্ষেত্রে, নারী ও পুরুষেরদের জন্য দুটো ভিন্ন প্রবেশ পথ ও আলাদা সময় রয়েছে।নারীরা শুধুমাত্র ফজর, জোহর ও এশার নামাজের পর সেখানে যাওয়ার অনুমতি পান। অন্যদিকে পুরষেরা তাহাজ্জুদের পর এবং সকাল ৮ থেকে ১০'টার মধ্যে সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

মুসল্লিদের মসজিদে নববীতে অবস্থিত এই স্থানটি চিনে নিতে যাতে বিশেষ কষ্ট না হয়, সেই উদ্দেশ্যে রিয়াজুল জান্নাহ পুরোটাই মুড়ানো রয়েছে সাদা ও সবুজ রঙের কার্পেটে।তাছাড়া, মসজিদের বাকি অংশের মেঝে লাল কার্পেটে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।

রিয়াজুল জান্নাহ'তে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে বেশ কয়েকটি স্তম্ভের। মহানবী (সা.)-এর সময়কালে এ সমস্ত স্তম্ভগুলো ছিল মূলত খেজুর গাছের খুঁটি।এসব স্তম্ভগুলো ঐতিহাসিক ইসলামিক স্মৃতি বহন করে বলেই এদেরকে রহমতের স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে।

উসমানি সুলতান সেলিম এবং উসলামি সুলতান আবদুল মাজিদের মত মুসলিম শাসকরা এসব স্তভ বা খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের কাজ করে গেছেন।

তবে সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে, সৌদি সরকার সবথেকে ভালো মানের পাথর দ্বারা স্তম্ভগুলো মুড়িয়ে দিয়েছেন।

এসব স্তম্ভগুলোর মধ্যে উসতুওয়ানাতুল-উফুদ বা প্রতিনিধি স্তম্ভটি এমন একটি স্থান যেখানে বসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল বিশ্বনবীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন।

নবীজির ইসলামের দাওয়াত এসব প্রতিনিধিরাই তাদের গোত্রের মাঝে ছড়িয়ে দিতেন। আর এভাবেই সেসময়ে পুরো বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এসব প্রতিনিধিদল ছাড়াও অনেক বড় বড় সাহাবায়ে কিরামরাও এই প্রতিনিধি স্তম্ভে বসে একসময়ে আলোচনা করতেন।

এরপরে আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্তভ হচ্ছে উসতুওয়ানাতুস-সারির। এই স্থানেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য খেজুরপাতার মাদুর ও বালিশ রেখে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হতো। পাশাপাশি এই স্থানে নবীজি ইতিকাফ'ও করতেন।উসতুওয়ানাতুস-সারির ও উসতুওয়ানাতুল-উফুদের মতো আরো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে, আয়েশা স্তম্ভ, সুবাস স্তম্ভ, এবং তওবা স্তম্ভ।

রিয়াজুল জান্নাহ'র কথা উল্লেখ আছে, নুরুদ্দিন সামহুদির লেখা অফা আল অফার দ্বিতীয় খণ্ডেও।সেখানে রূপক অর্থে বলা হয়েছিল, এই স্থানে ইবাদত করলে তা পৌঁছাবে বেহেশতের বাগানে।

তাই, হজ কিংবা ওমরা পালনে আসা অনেক মুসল্লিরাই রিয়াজুল জান্নাহ'তে নামাজ আদায়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রাখেন।

কিন্তু সেসময়ে প্রচন্ড ভীড়ের কারণে অনেকেই এই ইচ্ছা পূরণে ব্যর্থ হন। যদিও হজ বা ওমরা পালনের ক্ষেত্রে রিয়াজুল জান্নাহ'তে নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক নয়।

দুনিয়ার বেহেশতের বাগানে বসে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ'র কাছে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে মুমিনদের ভাগ্যের উপরে।