ধর্ম

মক্কার কাবা শরীফ রক্ষা করেছিল যে পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
মক্কার কাবা শরীফ রক্ষা করেছিল যে পাখি

ছোট্ট পাখি আবাবিল। যার হৃদয়ে স্পন্দে কাপন তুলেছিল কাবা ঘর ধ্বংস করতে আসা ইয়েমেনি শাষক আবরাহার সৈন্য এবং হস্তী বাহিনী।হিংসা পরায়ন সেই শাসক আর তার সৈন্যদের প্রতিহত করে পবিত্র কাবাঘরকে রক্ষা করেছিল এই পাখি।

আবাবিল পাখিকে ঘিরে ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে এরকম একটি গল্পেরই বর্ননা আছে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা ফিলে।

বর্নিত সেই গল্পে বলা হয়েছে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের শাসক আবরাহা তার রাজধানী সানাতে মক্কার আদলে একটি স্থাপনা নির্মান করেন। আর সবাইকে মক্কার পরিবর্তে সানাতে প্রার্থনার জন্য আসার নির্দেশও দেন।

কিন্তু ধর্মপ্রাণ সব মানুষ মক্কার পবিত্র কাবা ত্যাগের কথা কোনো ভাবেই ভাবতে পারে না। তাই প্রত্যেকেই সানাতে গিয়ে ইবাদতে বন্দেগী করতে অস্বীকৃতি জানাই। এতেই ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়ে যান ইয়েমেনি শাসক।

অতঃপর রাগান্বিত আবরাহা কাবা গুড়িয়ে ফেলার উদ্দেশ্য ৬০ হাজার সৈন্য ও ১৩ টি হাতি নিয়ে মক্কার দিকে যাত্রা করে।

পথিমধ্যেই তাদের ওপর বৃষ্টির মতো নুড়ি পাথরের ঢিল এসে পড়তে থাকে। সমগ্র আকাশে ছেয়ে যাওয়া আবাবিল পাখিই এই ঢিল ছুড়তে থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যাওয়ায় কাবা ধ্বংস করতে চাওয়া আবরাহা নিজের দেশে ফিরে যায়। এরপর থেকে ইসলাম ধর্মে এই পাখিকে খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।

রহস্যময় এক পাখি এই আবাবিল। অতীতে পশ্চিমাদের ধারণা ছিল শীতকালে এই পাখি চাঁদে যায়।
আবার অনেকে ভাবত শীত এলে তারা নদীর তলদেশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবাবিল নিয়ে গ্রিক এমনকি রোমান পুরানেও এরকম বহু রুপক গল্প আছে।

এই পাখি নিয়ে এখনো পশ্চিমাদের মনে নানা ধরনের মিথ এর প্রচলন আছেন। তারা বিশ্বাস করে, আবাবিল মাটির কাছাকাছি ওড়ার অর্থ হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আবার যদি অনেক উচুতে উড়ে যাওয়ার মানে আবহাওয়া ভালো থাকবে।

একবার মায়া ও প্রনয়ের দেবী আফ্রোদিতি ঝড়ের কারনে পথে মধ্যে বিপদে পড়েন। সেই সময় ক্ষুদার্থ ঐই সৌন্দর্যের দেবীর জন্য ফল নিয়ে আসেন আবাবিল।

এছাড়াও এই পাখি আফ্রোদিতিকে তার গন্তব্যে অলিম্পাসে পৌছে দেয়। আর শত বছর পর আজও যে স্থান থেকে দেবীকে সাহায্যে করছিল ঐই স্থানে প্রতিবছর এসে ঘুরে যায় এই আশ্চর্য আবাবিল।

মানুষের সাথে বিস্ময়কর সম্পর্কে থাকা পাখি আবাবিল শীত আসলে কোথায় যায়, কেন তাদের দেখা মেলে না! ১৬৮০ সালে ইংরেজি শিক্ষাবিদ চার্লস মর্টন দাবি করেন শীতকালে আবাবিল পাখি চাঁদে চলে যায়।

মর্টনের হিসাব অনুযায়ী দীর্ঘ দুই মাস ধরে উড়ে গিয়ে চাদে পৌছায় আবাবিল। আর এই সময় কোন ধরনের বাতাস তাদের পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে না।
পাখিরা গড়ে ঘণ্টায় ১২৫ মাইল গতিতে দুই মাস ধরে উড়ার পর চাঁদে গিয়ে পৌছায়। যাওয়ার পথে বাতাস তাদের পথে কোনো বাধার সৃষ্টি করে না। আর চাদে গিয়ে বেশিরভাগ সময় এই পাখি ঘুমিয়ে কাটায়।

আবার বৃটিশ লেখক স্যামুয়েল জনসন এর মতে পানি ভালোবাসে বলেই সোয়ালো বা আবাবিল নিশ্চিতভাবে পুরো শীতকাল ঘুমিয়ে কাটায় আর সেটা নদীর গভীর তলদেশে। এরকম হাজারো গল্প কাহিনী আছে এই আবাবিল পাখিকে ঘিরে।

দেশেও এই পাখির আগমন ঘটে। শীত এলেই আবাবিল অন্যপাখিদের মত বাংলাদেশে ঘুরতে আসে। এরা সাধারনত ৮১ বা কারো মতে ৮৯ জাতের আর বর্নের হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রজাতি শীতে উষ্ণতার খোজে এদেশে এসে থাকে।

আবাবিল বা শ্যালো পশ্চিম এর দেশ এবং আফ্রিকা মূলত এই পাখির জন্মস্থান। অতি সুরেলা আবাবিলের সাথে মানুষের সম্পর্কের যত গল্প আছে তা বোধহয় অন্য কোন পাখির নেই।

তবে মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফ রক্ষা করে এই পাখি ইসলাম ধর্মানুসারীদের কাছে এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে চলেছে।সেই ঘটনার পেক্ষিতে বিশ্বের সকল মুসলিমের হৃদয়ে প্রশান্তি আর প্রতিরক্ষার প্রতীক হিসেবে যায়গা করে নিয়েছে আবাবিল।