আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকা এবং পরে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিমান–নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তারা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘোষিত ‘জুলাই সনদ’ দেশের জন্য নতুন সূচনা তৈরি করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনেই নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি রচিত হয়েছে।

বৈঠকে ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংলাপকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে আশ্রয় ব্যবস্থার অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তাঁর সরকার বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করছে এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, দীর্ঘদিন ক্যাম্পে অবস্থানের ফলে রোহিঙ্গা তরুণেরা হতাশ হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন; তাই শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এখন অত্যন্ত জরুরি।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ ক্রয় করছে। অপর দিকে ব্যারোনেস চ্যাপম্যান দুই দেশের মধ্যে উড়োজাহাজ যোগাযোগ জোরদার করার আহ্বান জানান এবং উল্লেখ করেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক উপস্থিত ছিলেন।