জাতীয়

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জট খোলার চেষ্টায় সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জট খোলার চেষ্টায় সরকার
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্ভূত রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সরকার এখন সমঝোতার পথে এগোচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট—দুটোই একই দিনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

সরকার মনে করছে, দুটি ভোট আলাদা দিনে আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ১৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত হবে। এরপর ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট সংক্রান্ত আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করা হবে।


জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। বিএনপি চায়, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হোক। জামায়াতে ইসলামী চায়, গণভোট আগে এবং পরে জাতীয় নির্বাচন। সরকারও বিএনপির অবস্থানের কাছাকাছি, অর্থাৎ একই দিনে ভোট আয়োজনের পক্ষে।

সরকার আশা করছে, জামায়াত কিছুটা ছাড় দেবে, আর বিএনপি সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর পদ্ধতি মেনে নেবে।

উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সব দল, বিশেষ করে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের দাবি সামান্য সমন্বয় করেই সরকার সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকার নিজের মতো করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তবে দলগুলোর মতামত বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সরকার ৩ নভেম্বর সাত দিনের সময় দিয়েছিল। আজ সোমবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু দলগুলো নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনা বা বৈঠক করতে পারেনি। ফলে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপরই এসে পড়েছে।

বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। দলটি এখনো জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করলেও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে নমনীয় অবস্থানে আছে।

সরকারি সূত্র জানায়, এনসিপি চাইছে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ জারি করুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সরকার মনে করছে, এটি সাংবিধানিকভাবে সম্ভব নয়।

এনসিপি নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ গ্রহণ করেছে। সরকার মনে করছে, দলটি আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে না।

সরকারি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভিন্ন দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক ও আর্থিক জটিলতা তৈরি হবে।

গণভোটে কোনো দলীয় প্রার্থী না থাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে কষ্ট হবে।

বিএনপিসহ কিছু দলের মতের বিরুদ্ধে আগে গণভোট হলে তাদের নেতা–কর্মীরা অংশগ্রহণে আগ্রহ হারাতে পারেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দুটি ভোট আলাদা দিনে আয়োজন করলে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

একজন উপদেষ্টা বলেন, গণভোটে বিতর্ক তৈরি হলে সেটির নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। তাই দুটি ভোট একসঙ্গে করাই বাস্তবসম্মত।

সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করবে। এর পরপরই গণভোট আয়োজনের জন্য অধ্যাদেশ জারি হবে।

বর্তমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। ১৯৯১ সালের যে আইনে গণভোটের কথা বলা আছে, সেটি দিয়ে এবার আয়োজন করা সম্ভব নয়। কারণ, সেটি নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রযোজ্য।
প্রস্তাবিত গণভোটে দুটি প্রশ্ন থাকবে—  ১. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করা হবে কি না। ২. আদেশের তফসিলে থাকা ৪৮টি সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে কি না।

জুলাই সনদে বলা হয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে গঠিত হবে।
 জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো এই ব্যবস্থার পক্ষে। তবে বিএনপি চায়—নিম্নকক্ষে যে দল যত আসন পাবে, সেই অনুপাতে উচ্চকক্ষেও আসন বরাদ্দ হোক।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, পিআর পদ্ধতি কার্যকর হলে সংসদের ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
একজন উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি যদি পিআর পদ্ধতিতে রাজি হয়, তাহলে জামায়াতও একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটে রাজি হবে—এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
 ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। অন্য দলগুলোও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে।
সরকারের ধারণা, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি হলেই দলগুলো পুরোপুরি নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে।