ভূরাজনৈতিক প্রভাব, আঞ্চলিক শক্তিমত্তা, ধর্মীয় মূল্যবোধ… সবকিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মুখোমুখি অবস্থানে আছে ইরান এবং ইসরায়েল। বিগত কয়েক দশক ধরেই, দুই দেশ একে অন্যের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে আসছে।
দুই দেশেরই আছে নিজস্ব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। প্রত্যেকেই ব্যস্ত একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টায়। তবে দুই দেশের এমন প্রতিদ্বন্দিতার সবচেয়ে বড় মঞ্চ হয়ে উঠেছে সামরিক শক্তি। কোন দেশ যুদ্ধের ময়দানে বেশি এগিয়ে থাকবে, তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।
সামরিক শক্তিমত্তা বিষয়ক ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার জানাচ্ছে, সামরিক শক্তির বিবেচনায় একেবারেই সমানে সমানে অবস্থান করছে এই দুই দেশ। বৈশ্বিক সামরিক শক্তির বিচারে ইরানের অবস্থান ১৭তম স্থানে। আর ঠিক পরেই ১৮ তম স্থানে আছে ইসরায়েল।
দুই দেশের সামরিক শক্তিতে অনেক কিছুই আছে সমানে সমানে। তবে যুদ্ধের ময়দানে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে ইরান। বিশেষ করে স্থল আর জলভাগে অনেক বেশিই শক্তিশালী ইসলামিক রাষ্ট্রটি।
দুই দেশের সামরিক সদস্যের মাঝেও এগিয়ে আছে ইরান। তেহরানের হয়ে সক্রিয় সামরিক সেনা আছে ৫ লক্ষ ৭৫ হাজারের বেশি। বিপরীতে ইসরায়েলের সক্রিয় সেনা সদস্য ১ লক্ষ ৭৩ হাজার। ইরানের ৯০ হাজার প্যারামিলিটারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্যারামিলিটারি ফোর্স মোটে ৮ হাজার।
স্থলভাগের সামরিক শক্তির দিক থেকে ইসরায়েলের চেয়ে বেশিরভাগ সূচকেই এগিয়ে আছে ইরান। ট্যাংক ব্যবহারের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি আছে ৭ নাম্বারে। অন্যদিকে ইসরায়েলের অবস্থান ১২তম স্থানে।
ইরানের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। কিন্তু ইসরায়েলের ট্যাংক মোটে ২ হাজার ২০০ টি। ইসরায়েলের ৫৬ হাজার সাঁজোয়া যানের বিপরীতে ইরানের সাঁজোয়া যান প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি।
রকেট প্রজেক্টরের সংখ্যায় দুই দেশের মাঝে পার্থক্য অনেক বেশি। ইহুদি অধ্যুষিত দেশটির রকেট প্রজেক্টর যখন মাত্র ৩০০ টি, তখন ইরানের প্রজেক্টর ১ হাজারের বেশি।
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি ব্যবস্থায় অবশ্য তেহরান থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে তেল আবিব। তেহরানের হাতে এমন আর্টলারি ৫৮০ টি। আর তেল আবিবে আর্টিলারি আছে ৬৫০ টি।
স্থল্ভাগের মতো নৌপথেও মাত্র একটি সূচকেই এগিয়ে আছে ইসরায়েল। ইরানের ৩ টি করভেটের বিপক্ষে ইসরায়েলের করভেট ৭ টি।
ইরানের নৌবাহিনী বেশ অনেক আগে থেকেই সুনাম কুড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। তাদের নৌবহর সারাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌশক্তির মাঝে একটি।
তেহরানের কাছে বর্তমানে রণতরীর সংখ্যা ১০১ টি। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৬৭। সাবমেরিনের সূচকেও এগিয়ে আছে ইসলামিক দেশটি। তাদের ১৯ টি সাবমেরিনের বিপরীতে ইসরায়েলের সাবমেরিন মোটে ৫ টি।
দুই দেশের কারোরই বিমানবাহী রণতরী বা ডেস্ট্রয়ার নেই। জলপথের শক্তি বিবেচনায় তাই ইরান এগিয়ে থাকবে অনেকখানি।
ইসরায়েলের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে তাদের বিমানবাহিনী। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বাকি বিশ্বের কাছে ঈর্ষার কারণ। সর্বমোট ৬০১ টি বিমান, ২৪১ টি যুদ্ধবিমান, ১৫৩ টি ট্রেইনার আর ১১ টি ট্রেইলার নিয়ে অনেকটা এগিয়ে আছে ইসরায়েল।
যদিও দুই দেশের অস্ত্রবাহী বিমানের তালিকায় অনেকটা এগিয়ে আছে ইরান। ইসরায়েলের চেয়ে অন্তত ৭০ টি অস্ত্রবাহী বিমান বেশি আছে তেহরানের কাছে।