বিনোদন

‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা আর নেই

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪
‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা আর নেই
সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্গা। এই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে অমর হয়ে আছেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্ত। আজ সেই অভিনেত্রী সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন।
১৮ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন উমা দাশগুপ্ত। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। তিনি জানান, “উমার মেয়ের সঙ্গে সকালে দেখা হয়েছিল। তখনই জানতে পারি, উমাদি আর নেই। কয়েক বছর আগে তার ক্যানসার ধরা পড়েছিল। সেরে উঠলেও নতুন করে রোগ ফিরে আসে।”
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন উমা। কিছুদিন আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি।
উমা দাশগুপ্তের পুরো অভিনয় জীবন একটি সিনেমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সেই একক কাজই তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা চরিত্রটি তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিনেমার প্রতি তার ভালোবাসা এবং সহজাত অভিনয় প্রতিভা তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
‘পথের পাঁচালী’ ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রথম পরিচালনা। এই সিনেমা কেবল বাংলা নয়, বিশ্ব সিনেমার একটি মাইলফলক। উমার অভিনীত দুর্গার চরিত্রটি ছিল সজীব, প্রাণবন্ত, এবং অসাধারণ। এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ বাংলার শিশুদের সরলতা, দারিদ্র্য এবং জীবন সংগ্রামের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল।
‘পথের পাঁচালী’ মুক্তির পর সিনেমাটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মহলে বিপুল সাড়া ফেলে। এটি কানে পুরস্কৃত হয় এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসিত হয়। কিন্তু এর সাফল্যের পেছনে উমা দাশগুপ্তের অভিনয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তার সজীব ও প্রাঞ্জল অভিনয় দুর্গা চরিত্রকে বাস্তবের ছোঁয়া দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই সিনেমার অন্যান্য চরিত্রেও ছিলেন কানো রায়ের অপু এবং করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরোজিনী। কিন্তু দুর্গার মিষ্টি, উচ্ছল উপস্থিতি এবং তার অকাল মৃত্যুর দৃশ্য দর্শকদের মনে এক অমোচনীয় ছাপ ফেলেছিল।
উমা দাশগুপ্ত কখনো অভিনয় জগতে পুনরায় প্রবেশ করেননি। তিনি ব্যক্তিজীবনে খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তবে, সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তিনি ছিলেন ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা। জীবনে আর কোনো সিনেমায় অভিনয় না করলেও এই একটি কাজই তাকে অমরত্ব দিয়েছে।
উমা দাশগুপ্তের প্রয়াণে সিনেমাপ্রেমী এবং সংস্কৃতিমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী এবং এক অনন্য প্রতিভার যুগের অবসান ঘটল।
সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র এবং উমার একমাত্র অভিনীত সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরজীবন্ত হয়ে থাকবে। দুর্গার চরিত্রের মাধ্যমে উমা দাশগুপ্ত যে স্মৃতি রেখে গেছেন, তা সময়ের সাথে ম্লান হবে না।