বিনোদন

ভাইরাল সেই স্ক্রিনশটের ব্যাখ্যা দিলেন ফারুকী

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪
ভাইরাল সেই স্ক্রিনশটের ব্যাখ্যা দিলেন ফারুকী
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার অবস্থান ও কাজ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষত, ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য হন। স্ক্রিনশটটিতে দাবি করা হয়, ফারুকী নাকি শাপলা চত্বর ‘জঞ্জালমুক্ত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন এবং স্ক্রিনশটটিকে ‘ফেইক’ বা মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, "মানুষ ও ফিল্মমেকার হিসেবে তিনি মধ্যপন্থার অনুসারী।" তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে ধর্মীয় বিষয়ে কটাক্ষ করা উচিত নয়। শাপলা চত্বরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুতে ঘুমাতে পারেননি এবং ওই সময় ইংরেজিতে লেখা একটি পোস্টে এ বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
ফারুকী আরও বলেন, তার আপন দুই ভাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে, তাই তিনি কখনও মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুতে আনন্দিত হতে পারেন না। তিনি বলেন, “আমি সাধারণ মাদ্রাসাছাত্রদের মৃত্যুতে উল্লাস করব? মাদ্রাসার ছাত্র কেন, কোনো মানুষের মৃত্যুতে আমি উল্লাস করব?” তিনি বলেন, এমনকি অপরাধীর মৃত্যুতেও তিনি শোক করেন। তিনি সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, মিথ্যা খবর ছড়ানোরও একটা সীমা থাকা উচিত।
ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে জানান যে, তার ছোট ভাই কিবরিয়া পরিচালিত ‘আব্দুল্লাহ’ নামের একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, কেবল মাদ্রাসায় পড়ার কারণে কীভাবে একজন সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্রকে সমাজে অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।
এদিকে, উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ফারুকী নানা বিষয়ে কাজের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা আমাদের কাজটা এনজয় করছি। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুটা করতে পারব, যার মাধ্যমে আট বিভাগীয় শহরে একটি নবতরঙ্গ শুরু হবে।” তিনি আরও বলেন, তিনি একটি এক্স-রে রিপোর্ট তৈরি করতে চান, যা গত ১৫ বছরের সমস্যাগুলোর একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন হবে।
গত সোমবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফারুকী বলেন, উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি মনে করেছিলেন যে তিনি এই কাজ করতে সক্ষম। তিনি বলেন, “আমি ফ্যাসিস্টবিরোধী কি না, তার পুরস্কার হিসেবে আমার কাজ প্রয়োজন নেই। আমি ফ্যাসিস্টদের বিরোধিতা করেছি আমার বিবেকের কারণে। অবশ্যই এই পদের জন্য নয়।”
রাজনৈতিক বিষয়ে তার অবস্থান সম্পর্কে ফারুকী বলেন, “আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত—সবাই আমাকে গালি দেয়। কারণ, আমি কারও লোক নই। আমি আমার লোক। আমি যেটা ঠিক মনে করি, সেই মুহূর্তে সেটাই বলি। আমার কোনো দলের প্রতি চিরস্থায়ী সমর্থন নেই। কারণ, আমি একজন শিল্পী, এবং শিল্পীর কোনো দল থাকতে পারে না।”
ফারুকী আরও বলেন, তিনি নিজের বিবেক ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন। তিনি মনে করেন, রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার সঙ্গে তার কোনো স্থায়ী বন্ধন নেই এবং তা কোনোদিন থাকবে না। তবে তিনি আশা করেন, শিল্প, সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ফারুকী। তার নিয়োগকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার সুরধ্বনি শোনা যাচ্ছে, এবং তার কার্যক্রম নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন যে, তার এই দায়িত্বে তিনি দেশের সংস্কৃতিকে আরও উন্নত ও সুসংহত করার সুযোগ পাবেন।