ভারতের আলোচিত ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সুকেশ চন্দ্রশেখর, যিনি ২০০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় কারাবন্দী, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি ট্রাম্পকে ‘বড়দা’ সম্বোধন করেছেন এবং তার নির্বাচনী জয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যদিও তিনি কারাবাসে রয়েছেন, তার মনোযোগ কিন্তু প্রেমিকা ও বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের প্রতিও পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। চিঠির মাধ্যমে সুকেশ তার জীবন ও অনুভূতির কথা ট্রাম্পকে জানান এবং জ্যাকুলিনের প্রতি তার গভীর ভালবাসার প্রকাশ করেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সুকেশ চন্দ্রশেখর তার চিঠিতে ট্রাম্পের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রায় এক যুগ আগে আমাদের শেষ সাক্ষাতের কথা আজও আমার মনে আছে। তখন আপনি আমাকে একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন—এই পৃথিবীকে যেমন আছে তেমনভাবেই গ্রহণ করো, কিংবা যেভাবে তুমি দেখতে চাও, সেভাবেই দেখো।” এই কথাগুলো তার মনে এখনো গভীর প্রভাব ফেলছে বলে উল্লেখ করেন সুকেশ। তিনি চিঠিতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেন তাকে উৎসাহ ও ভালোবাসা দেওয়ার জন্য এবং ব্যক্তিগতভাবে ‘ভাই’ সম্বোধনে ট্রাম্পকে ভালোবাসা জানান।
সুকেশ আরও জানিয়েছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে চান, এবং সেই বিনিয়োগের পরিকল্পনার পিছনে জ্যাকুলিনের জন্য বিশেষ একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তার মতে, ট্রাম্প তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তিনি তার প্রেয়সীকে সর্বদা সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে মাথায় তুলে রাখেন। সেই পরামর্শ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে সুকেশ যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্টুডিওতে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার কারণ হিসেবে তিনি জ্যাকুলিনের প্রতি তার গভীর ভালবাসা এবং তাকে সম্মান প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন।
সুকেশ চন্দ্রশেখরের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি সমাজের উঁচুস্তরের ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে আর্থিক প্রতারণা করে আসছেন। এসব প্রতারণার অভিযোগে তাকে ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজও আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন, যেহেতু তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শ্রীলঙ্কার নাগরিক হলেও বলিউডের সাথে যুক্ত থাকার কারণে জ্যাকুলিনও এই কেলেঙ্কারির অংশ হিসেবে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তিনি সুকেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্তারিত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। সুকেশের মাধ্যমে প্রাপ্ত কিছু মূল্যবান উপহার নিয়েও তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
সুকেশের চিঠি প্রকাশের পর অনেকে এটিকে প্রহসন এবং মিথ্যাচার হিসেবে অভিহিত করেছেন। আইনজীবীদের মতে, এই চিঠির মাধ্যমে সুকেশ তার প্রভাব ও সংযোগগুলোর কথা তুলে ধরে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে চান। তিনি ট্রাম্পের মতো একজন বিশ্বনেতার সাথে তার যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন এবং তাতে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছেন। যদিও তিনি বন্দী অবস্থায় আছেন, তবুও বিভিন্ন সময়ে তার কর্মকাণ্ড এবং প্রকাশিত চিঠিপত্রে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি জেলে থেকেও অনেক বেশি আলোচনায় থাকতে সক্ষম।
অন্যদিকে, সুকেশের এই চিঠি নিয়ে জ্যাকুলিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। এই ঘটনা তাদের সম্পর্ককে কতটা প্রভাবিত করবে তা বলাই মুশকিল। তবে এত বিতর্ক এবং তদন্তের মাঝে সুকেশের এ ধরনের চিঠি বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুকেশের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য জ্যাকুলিনের বলিউড ক্যারিয়ারও কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিভিন্ন কাজ থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বলিউডে তার অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। তবে এ নিয়ে জ্যাকুলিন সরাসরি কিছু বলেননি। তাকে ঘিরে নানা বিতর্কের মাঝেও তিনি তার কাজে মনোযোগী থাকার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।
এই চিঠির মাধ্যমে সুকেশ চন্দ্রশেখরের জীবন ও তার ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার একটি বিশেষ দিক প্রকাশ পেয়েছে। ট্রাম্পকে বড়দা বলে সম্বোধন করার পাশাপাশি জ্যাকুলিনের জন্য তার নিবেদিত বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডিও স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা সত্যিই তাকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছে।