বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তি ফয়জান খানকে গ্রেফতার করেছে মুম্বাই পুলিশ। ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা ফয়জান খান, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী, শাহরুখের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার দাবি জানিয়েছিলেন। গত ৫ নভেম্বর মুম্বাই পুলিশের কাছে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ফোন কল আসে, যেখানে বলা হয়, "মান্নত, ব্যান্ডস্ট্যান্ডওয়ালা শাহরুখ আছেন না। উনি যদি ৫০ লাখ না দেন, তাহলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলব।" এই হুমকির সাথে সাথে হুমকিদাতা ফোন কেটে দেন এবং তার নাম হিসেবে "হিন্দুস্থানি" উল্লেখ করেন।
এই হুমকি পাওয়ার পরপরই পুলিশ ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পারে যে কলটি ছত্তিশগড়ের রায়পুর থেকে করা হয়েছে এবং তা ফয়জান খানের নম্বর থেকে এসেছে। পরবর্তী সময়ে পুলিশের একটি দল তদন্তের স্বার্থে ফয়জানের বাসায় গিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে। তদন্তে উঠে আসে যে ফয়জান খান, যিনি নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, কয়েকদিন আগে বান্দ্রা থানায় শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেন যে, ১৯৯৩ সালের "আঞ্জাম" ছবির একটি দৃশ্যে হরিণ হত্যা দেখানো হয়েছিল, যা দুই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, ফয়জান দাবি করেন, গত ২ নভেম্বর, যা শাহরুখ খানের জন্মদিন, সেই দিন তার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়, এবং তিনি স্থানীয় থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ফয়জানের দাবি ছিল যে, তিনি কোনো হুমকি দেননি, বরং তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি তিনি তার বয়ান ভার্চ্যুয়ালি গ্রহণ করার জন্য মুম্বাই পুলিশ কমিশনারকে চিঠিও লেখেন। তবে মুম্বাই পুলিশ তার এই দাবিতে সন্তুষ্ট হয়নি। তার বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় এবং তদন্তে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মুম্বাই পুলিশের এক সূত্রে জানা যায়, ফয়জানের দাবি ও তার হুমকির মধ্যে পরিষ্কার বিভ্রান্তি ছিল। সে দাবি করেছিল যে তার ফোন চুরি গিয়েছে, অথচ এই ফোন থেকেই শাহরুখ খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। ফয়জান আরও দাবি করেন যে, তিনি শাহরুখের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন শুধুমাত্র সমাজে সঠিক বার্তা পৌঁছানোর জন্য। তিনি শাহরুখকে "সন্ত্রাসের প্রতীক" বলে অভিহিত করেন এবং বলেন যে, জনপ্রিয় তারকারা তাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
ফয়জান খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তার আইনজীবী পেশার নীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড হিসেবেই গৃহীত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুম্বাই পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে, যারা তাকে নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। মুম্বাই পুলিশ আশা করছে যে এই জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে, যা এই হুমকি এবং দাবির আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার করবে।
অন্যদিকে, হুমকির এই ঘটনায় শাহরুখ খান এবং তার পরিবার অনেকটাই আতঙ্কিত এবং তার বাসভবন "মান্নত"-এর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। শাহরুখের আইনজীবী এ বিষয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং শাহরুখের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। মুম্বাই পুলিশও এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের হুমকির ঘটনা না ঘটে।
ফয়জান খান তার বক্তব্যে বারবার দাবি করেছেন যে তিনি এই হুমকির ঘটনায় জড়িত নন এবং এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে, মুম্বাই পুলিশ তার দেওয়া বয়ানে সন্তুষ্ট না হওয়ায় এবং তাকে গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়জানের সত্যিকারের উদ্দেশ্য বের করতে আরও তদন্ত চলছে।