চীনা অ্যাপ ই-মুভির’ খপ্পরে পরে স্বর্বশান্ত! রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেশ কিছু গ্রামের হাজার হাজার মানুষ রাতারাতি কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন।
প্রেমতলী, ডুমুরিয়া, খেতুর ও ফাহাদপুরের লোকজন এই প্রতারনার সরাসরি শিকার হয়েছেন। উল্লেখ্য এই গ্রামগুলোর ৪ যুবক এই প্রতারণার মূলে রয়েছেন।
তারা ‘চীনা ই মুভি’ এ্যাপের ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এ্যাপটিতে একাউন্ট খুলে দিয়েছিল।
গ্রামের মানুষদেরকে বলা হয়েছিল, দুই হাজার টাকা দিয়ে এ্যাপটিতে একাউন্ট খুলতে হবে। তারপর টাকাকে পরিণত করতে হবে ডলারে।
এর জন্য নগদ বা বিকাশের মাধ্যমেও টাকা জমা দেওয়ার সিস্টেম রেখেছিলো তাঁরা। এরপর ডলার দিয়ে সিনেমার টিকিট কিনলেই মিলবে মুনাফা!
যে যতবেশি টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলবে আর বেশি সংখ্যক টিকিট কিনবে, সে তত বেশি মুনাফা পাবে। সেই সাথে তার মুনাফার হারও হবে অনেক বেশি।
এ ছাড়াও, নিজে একাউন্ট খোলার পর অন্যজনকেও একাউন্ট খুলে দিলেও নিজের হিসাব নম্বরে বাড়তি ডলার যোগ হতো।
যেকোনো সময়ই চাইলে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে সেই মুনাফার টাকা তুলতে পারতেন তাঁরা।
আর এসব লোভনীয় অফারই পুরো গ্রামের মানুষ এই এ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আর এই লোভই কাল হলো। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে গায়েব চীনা এ্যাপ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট দালালেরা!
গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে এই অ্যাপ বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তুলেছিল।
প্রথম দিকে যাঁরা করেছেন, তাঁদের অনেকেই
টাকা তুলেছেন। কেউ কেউ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন।
তাঁদের দেখাদেখি অল্পসময়ে বড়লোক হওয়ার আশায় কেউ কেউ গরু বিক্রি করে দিয়েছেন, এক যুবক তাঁর বাবাকে না জানিয়ে বাবার অটো রিকশাই বিক্রি করে দিয়েছেন, কিস্তির টাকা ভেঙ্গে ফেলেছেন, কেউ আবার নিজের শেষ সম্বল ভিটে-মাটি টুকু বিক্রি করে টাকা ঢুকিয়েছেন ঐ এ্যাপে।
তবে কথায় আছে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। ঠিক এটাই হয়েছে রাজশাহীর অতি মুনাফালোভী মানুষদের সাথে। হাজার হাজার টাকা এই এ্যাপে ঢুকিয়ে আজ নিঃস্ব গ্রামের মানুষজন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই অ্যাাপে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে টাকা “CASH OUT” করা যাচ্ছে না। এ্যাপে ঢুকলে তাঁদের একাউন্ট নম্বরে টাকার পরিমাণ শূন্য দেখাচ্ছে।
রাজশাহী শহরেও এই “E-Movie” অ্যাাপের কার্যালয় খোলা হয়েছিল। মঙ্গলবার থেকে ঐ অফিসে ঝুলছে তালা। কার্যালয়টির দ্বায়িত্বে আজমল হুদা ওরফে মানিক নামের এক ব্যাক্তি ছিলেন। বর্তমানে তিনি পলাতক।
গ্রামের মানুষেরা এখন লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁরা পাওনা টাকার আশায় মালিকের বাড়িতে হানা দিচ্ছেন।
প্রতারকদের প্রধান টার্গেট ছিলো গ্রামের নিম্নআয়ের মানুষজন। আর গ্রামের যুবকদের যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে তাদেরকেও তাঁরা নজরে রেখেছিলেন। বাড়ির মহিলাদেরকে ও তাঁরা ছাড় দেননি। স্মার্টফোন আছে এমন কোনো বাড়ির মানুষ এই প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি।
প্রতারিত হওয়া মানুষজন লজ্জায়কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। নারীরাও স্বামীকে না জানিয়ে টাকা দিয়েছেন। তাঁরা এখন ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। তাঁরা স্বীকার করেন অন্যের কথায় লোভে পড়ে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ করেছেন। এ জন্য কাউকে কিছু বলতে পারছেন না।
গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের বেশিরভাগ ঘরেই থাবা দিয়েছে অনলাইন এই এ্যপস। যে চার যুবক গ্রামে প্রচারণা চালিয়েছেন শুধুমাত্র তারাই লাভবান হয়েছেন। করেছেন বাড়ি, গাড়ি। আর বাকিদের কপাল পুড়েছে।
রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে এই অনলাইন ভিত্তিক অ্যাাপের প্রতারণার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ‘CAF’ নামের একটি অ্যাপের খপ্পরে পড়ে উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষ লজ্জায় কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
অনলাইন এই অ্যাাপে টাকা কামানোর পথ যেন একটা নেশা হয়ে উঠেছে গ্রামের মানুষদের মধ্যে। মাদকের মতো এ নেশা যদি দ্রুতই থামানো না যায়, তবে সমাজে অপরাধপ্রবণতা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।